Thursday 23 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইসিকে বিএনপির ৩৬ প্রস্তাব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:২০ | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ২০:০৫

ঢাকা: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ৩৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এস এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ প্রস্তাবসমূহ উপস্থাপন করেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

প্রস্তাবগুলো হলো:

১. বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের জন্য এখনই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে এই সরকারের ও নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে হবে।

২. নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে মাঠ প্রশাসনকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে। যেমন, ডিসি (RO), ইউএনও (ARO), এসপি, ওসি এবং ক্ষেত্রমতে কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, সকলের জন্য প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ্য যে, জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে এ ধরনের পুনর্বিন্যাস একটি রুটিন প্রক্রিয়া, যা অবশ্য করণীয়।

বিজ্ঞাপন

৩. বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের অবৈধ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সব বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদেরকে কোনোরূপ নির্বাচনি দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।

৪. রিটার্নিং অফিসার হিসেবে প্রশাসনের অফিসারদের পাশাপাশি সম্ভাব্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা (ইলেকশন সার্ভিস) কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে দক্ষ, সৎ, অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫. নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনের সমগ্র প্রক্রিয়ায় জড়িত বেসামরিক প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীসহ আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব কর্মকর্তার বদলি, পদায়ন, অবস্থান, দায়িত্ব ও তাঁদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের ভার নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে নিতে হবে। সব ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের কমপক্ষে এক সপ্তাহ পূর্ব হতে সামরিক বাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশসহ সব আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

৬. নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচনকালীন সময়ে অনিয়মতারোধে কমিটি গঠন ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বর্তমানে বিধান বলবৎ রয়েছে। নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালন, অবলোকন এবং নির্বাচনকে জনগণের নিকট দৃশ্যমান, বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য বিচার বিভাগীয় ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও ম্যাজিস্ট্রেরিয়‍্যাল ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।

৭. ভোটারগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ অবাধ, নির্বিঘ্ন, স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান করার জন্য ভোটকেন্দ্রের গোপনীয় কক্ষের কার্যক্রম ব্যতীত ভোটকেন্দ্রের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ দৃশ্য বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির নিমিত্ত সিসি ক্যামেরা সংস্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. নির্বাচনি সময়সূচি ঘোষণার সাথে সাথে প্রত্যেক জেলার জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে এবং প্রত্যেক উপজেলা/থানায় উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার কার্যালয়ে একটি করে অভিযোগ নিরসন কেন্দ্র (Complain Redress Centre) চালু করতে হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো অভিযোগ প্রাপ্তির ১২ ঘণ্টার মধ্যে বা যত দ্রুত সম্ভব, তা নিষ্পত্তি করে অভিযোগকারীকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।

৯. জুলাই’ ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/ গভর্নিং বডি গঠিত হয়েছে। হঠাৎ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তড়িঘড়ি করে ১লা নভেম্বরের মধ্যে নতুন করে নির্বাচন সম্পন্নের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হয়। এই কার্যক্রমের ফলে সারাদেশে শিক্ষক/শিক্ষিকাদের বার্ষিক পরীক্ষার অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, ভোটকেন্দ্রের নির্বাচনের প্রাক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো একটি বৃহৎ কার্যক্রমে শিক্ষক/শিক্ষিকা, অভিভাবক/অভিভাবিকা তথা ভোটারদের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি নির্বাচনসংক্রান্ত নির্দেশনা স্থগিত করতে হবে।

১০. নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বা পোলিং পারসোনাল তথা প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বমহলের নিকট চিহ্নিত এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়োগ প্রদান করা যাবে না। যেমন : ইসলামি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য যে, ইতোমধ্যে ইসলামি ব্যাংকে সারাদেশে প্রায় ৫,০০০ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়োগ বাতিল করেছে এবং এসব শূন্য পদে তড়িঘড়ি করে দলীয় লোকজন নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে।

১১. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে জুলাই’২৪ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাকর্মীদের নামে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে দায়েরকৃত মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলাসমূহ নির্বাচনি সময়সূচি জারির পূর্বেই প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১২. নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পূর্বেই বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় প্রদত্ত সব অস্ত্র সরকারের কাছে জমা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

১৩. সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা অগণিত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৪. সীমান্ত পথে আসা অবৈধ অস্ত্র, নকল টাকা, কালো টাকার অনুপ্রবেশ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৫. সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে এবং দূতাবাসগুলোতে চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

১৬. নির্বাচন অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও পক্ষপাতহীন হতে হবে। ভোটারদের স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগে সম্ভাব্য সব প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

১৭. নির্বাচনে সম্ভাব্য সব কারচুপির সুযোগ প্রতিরোধ করে নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত ফলাফল নিশ্চিত করতে হবে।

১৮. ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি, পেশিশক্তি ব্যবহার ও প্রভাব প্রতিরোধ করতে হবে।

১৯. নির্বাচনি এলাকায় বহিরাগত কোনো লোক নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

২০. নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের গৃহীত সাংবিধানিক শপথের প্রতি অনুগত থেকে নিরপেক্ষ ও সাহসী হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সংবিধান ও আইনের প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগে নির্ভীক হতে হবে।

২১. নির্বাচন যে অবাধ, নিরপেক্ষ ও কারচুপিমুক্ত হচ্ছে তা দেশ ও জাতির কাছে দৃশ্যমান হতে হবে।

২২. সব ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

২৩. কোনো রাজনৈতিক দল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কর্তৃক বিতর্ক তৈরি করে এমন কোনো বক্তব্য যাতে না দেয় তার প্রাক ব্যবস্থা থাকতে হবে।

২৪. নির্বাচনে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ায়- এমন সব অপপ্রচার রোধ করতে হবে।

২৫. ভোটারদের প্রভাবিত করে এরূপ ধর্মীয় প্রলোভন বা ধর্মীয় দণ্ড প্রদানের ভীতি প্রদর্শন রোধ করতে হবে।

২৬. অর্থ, দুর্নীতি ও সহিংসতা অর্থাৎ Trippple ‘C’ (Cash, Corruption, Criminality)- এর অসৎ প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে।

২৭. ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে বিধি-বিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভোটকেন্দ্রকে ভোটারদের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। যতদূর সম্ভব কমসংখ্যক ভোটার নিয়ে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করাই উত্তম। এতে কম দূরত্ব অতিক্রম করে ভোটারগণ সহজেই ভোটকেন্দ্রে ভোটদানে উৎসাহিত হবেন।

২৮. নির্বাচনের যাবতীয় নিয়মকানুন-ভোটাধিকার, ভোটদান প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে ভোটারসহ আপামর জনসাধারণকে পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন, লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভোটার সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

২৯. নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইনে বর্ণিত সব নির্বাচনি কর্মকর্তাদের (রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাবৃন্দ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ) সার্বিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

৩০. ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের মধ্যেই কেবল নয়, বরং এর বাইরেও নির্বাচনি এলাকার যে-কোনো স্থানে সন্ত্রাসী তৎপরতা তাৎক্ষণিকভাবে দমন করতে হবে।

৩১. স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের তাদের নিজস্ব জেলায় দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। তা ছাড়া রাজনৈতিক মতাদর্শী বা কোনো দলীয় ভাবধারা প্রচার করে এমন পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া যাবে না।

৩২. আনসার ও ভিডিপি মোতায়েনের ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই নিজ জেলায় মোতায়েন করা যাবে না।

৩৩. কমিউনিটি পুলিশকে কোনোভাবেই ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন করা যাবে না।

৩৪. ছবিসহ ভোটার তালিকা পোলিং পার্সোনাল সব পোলিং এজেন্টদেরকেও যথাসময়ে সরবরাহ করতে হবে।

৩৫. ভোট গণনা শেষ হবার পরপরই নির্বাচনের ফলাফল প্রতিটি কেন্দ্র হতে সরাসরি ঘোষণা করতে হবে।

৩৬. প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ আইনানুগ স্বচ্ছতার সাথে করতে হবে। বিভিন্ন দেশে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দানে ইচ্ছুক রেজিস্টার্ড প্রবাসী ভোটারদের তালিকা রাজনৈতিক দলকে যৌক্তিক সময়ের পূর্বেই সরবরাহ করতে হবে।

তবে, বিএনপির পক্ষ থেকে লিখিত কোনো লিখিত প্রস্তাবনা সিইসির কাছে জমা দেওয়া হয়নি বলে জানান দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ড. আব্দুল মঈন খান।

সারাবাংলা/এনএল/এমপি
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর