ঢাকা: জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রোববার (২ নভেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথসভা শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যাচারের মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার এক গভীর অপচেষ্টা চলছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ দেশের প্রতিটি মানুষ বারবার চিন্তা করছে, কী হবে—কী হতে পারে। যত সময় যাচ্ছে, ততই একটি অশুভ শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টায় লিপ্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যাচারের বন্যা, যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে সোশ্যাল মিডিয়ায় অসত্য ও বিকৃত তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটি একটি পরিকল্পিত অপচেষ্টা—দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণকে উত্তেজিত করার একটি কৌশল।’
তিনি যোগ করেন, ‘৭ নভেম্বর দিনটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ১৯৭৫ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করা হয়। তখন দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীরা জিয়াউর রহমানকে বন্দি করে রেখেছিল। সেই সময় দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনগণ একত্রিত হয়ে তাকে মুক্ত করে আনেন। এরপরই শুরু হয় বাংলাদেশের সাফল্যের নতুন অধ্যায়।’
ফখরুলের দাবি, ‘‘শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ক্ষণজন্মা নেতা। তিনি ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনিই প্রথম ঘোষণা দেন—‘I hereby declare the independence of Bangladesh.’”
তিনি বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানের সময় দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশাল’ চালু হয়েছিল, যা প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কারণে দেশকে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত করেছিল। লাখো মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে দেশকে উদ্ধার করেন শহিদ জিয়া।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেন, গঠন করেন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। অর্থনীতিতে তিনি নতুন যুগের সূচনা করেন। গার্মেন্টস শিল্প, প্রবাসে শ্রমিক প্রেরণ— সবই তার হাত ধরে শুরু। রেমিট্যান্স আজ যে অর্থনীতির মেরুদণ্ড, তার ভিত্তি স্থাপন করেন তিনিই।”
ফখরুল আরও যোগ করেন, “নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি বিপ্লব, শিল্পে তিন শিফটে উৎপাদন— সবই তার দূরদর্শী নীতির ফল। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এক উদীয়মান ‘টাইগার’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল।”
তবে ফখরুলের ভাষায়, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু তার দর্শন, তার আদর্শ আজও বেঁচে আছে। তার প্রদত্ত ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’-এর আদর্শ কখনও পরাজিত হয়নি। বিএনপিও বারবার ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়া যেমন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, আজ তারই উত্তরসূরি তারেক রহমানও সুদূর প্রবাস থেকে সেই ঐক্যের চেষ্টা করছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে সংগ্রামের ধারাবাহিকতা গড়ে উঠেছিল, সেটি আজ তারেক রহমান নতুনভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন।”
আলোচনা সভা শেষে বিএনপি মহাসচিব ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—
১. ৭ নভেম্বর সকাল ৬টা: বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় পতাকা উত্তোলন।
২. ৭ নভেম্বর সকাল ১০টা: মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা ও ফাতেহা পাঠ।
৩. ৭ নভেম্বর বিকাল ৩টা: নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে র্যালি।
৪. অঙ্গসংগঠনের পৃথক কর্মসূচি:
শ্রমিক দল: ৫ নভেম্বর আলোচনা সভা
ছাত্রদল: ৮ নভেম্বর টিএসসি-তে আলোচনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী
ওলামা দল: ৯ নভেম্বর এতিম শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
তাঁতী দল: ১০ নভেম্বর আলোচনা সভা
কৃষকদল: ১১ নভেম্বর আলোচনা সভা
জাসাস: ১৩ নভেম্বর শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
৫. ১২ নভেম্বর: চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় আলোচনা সভা।
৬. ৬–১৩ নভেম্বর: ডকুমেন্টারি, ভিডিও ও স্থিরচিত্র প্রকাশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
৭. ৭ নভেম্বর: পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “৭ নভেম্বর কেবল একটি দিবস নয়, এটি জাতির চেতনার প্রতীক। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেখানো পথে আমরা এগিয়ে যাব— গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের পথে।”
তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের শত্রুরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, কিন্তু আমরা দেশপ্রেমিক জনগণের শক্তিতে তাদের প্রতিহত করব।”