Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আ. লীগে আজও দেড় ডজন বিদ্রোহী প্রার্থী: কাল থাকলে কঠোর ব্যবস্থা


১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:১৮

।।স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আলটিমেটামের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর (সোমবার)। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে একাধিক দলীয় সভায় দলের মনোনয়নের বাইরে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। কিন্তু মনোনয়নের পর দেখা যায় আওয়ামী লীগের ৭৬টি আসনে শতাধিক বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে অবশ্য ধীরে ধীরে অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। তবে এরপরেও অন্তত দেড় ডজন আসনের বিদ্রোহী প্রার্থী এখনো রয়ে গেছেন। আজ ১৭ ডিসেম্বর সোমবার পর্যন্ত তাদের নির্বাচনি মাঠে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

                     আরও পড়ুন: বিদ্রোহী প্রার্থীরা সরে না দাঁড়ালে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

এদিকে ১৭ ডিসেম্বরেই শেষ হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দেওয়া আল্টিমেটাম। আজ রাত ১২টার মধ্যে এই বিদ্রোহীরা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই সিদ্ধান্ত রয়েছে।

দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।

একাধিক নেতা বলেছেন, এর কোন বিকল্প ভাবা হচ্ছে না।

তারা বলছেন, এরইমধ্যে অনেকেই নিজ নিজ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ শুরু করেছেন। আশা করা হচ্ছে বাকিরাও বেঁধে দেওয়া সময়সূচির মধ্যে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াবেন এবং একই পথে হাঁটবেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকারের মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজে নামার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা চার কেন্দ্রীয় নেতার অন্যতম আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আজকের (১৭ ডিসেম্বর) মধ্যে বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য বলেছি। দলের আহ্বান বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাকিরা আজকের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যাবেন এবং দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

তিনি বলেন, এই আহ্বানের পরেও যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন না তাদের দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে।

দলীয় সুত্রে জানা গেছে, সারাদেশের এখনও আওয়ামী লীগের অন্তত ১৮ থেকে ২০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদের মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে দল অথবা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত কয়েকজন এমপিও রয়েছেন। ফলে ওইসব আসন নিয়েই বেশি উদ্বেগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের।

আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত ফরিদপুর-৪ (সদরপুর-ভাঙ্গা-চরভদ্রাসন) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তিনি গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাজী জাফরউল্লাহর বিরুদ্ধে জিতেছিলেন। এবারের নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

নৌকার প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহর বিরুদ্ধে নিক্সন চৌধুরী লড়ছেন সিংহ প্রতীক নিয়ে। দলের কোনো পদে না থাকায় ‘আজীবন বহিষ্কারের’ সিদ্ধান্তের বিষয়টি ততটা আমলে নিচ্ছেন বলে তার সমর্থকরা জানান। তিনি শেষ পর্যন্ত লড়াই করবেন বলেও জানা গেছে।

মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করলেও সেখানে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আল আমিন মোল্লা সিংহ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারুল আবেদিন খানের বিপক্ষে নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম কুড়াল প্রতীকে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন।

নরসিংদী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন জহিরুল হক ভূঞা মোহন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়ী হন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। এবারও দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে সিংহ প্রতীকে লড়ছেন।

মানিকগঞ্জ-১ আসনে বর্তমান এমপি এ এম নাঈমুর রহমান দূর্জয় আবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ প্রকৌশলী এ বি এম আনোয়ারুল হক সিংহ প্রতীকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের ছেলে পৌর মেয়র ফয়সাল বিপ্লবের স্ত্রী চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একতারা প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে আছেন।

যশোর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক কায়সার হাসান বারী। ঢাক প্রতীকে নির্বাচন করছেন তিনি। স্বপন ভট্টাচার্য্য ২০১৪ সালে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেও তার বিরুদ্ধে নোঙর প্রতীকে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন উপজেলা যুবলীগের নেতা আবদুল্লাাহ নজরুল।

গাইবান্ধা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ইউসুফ আলী সরকার মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনি প্রচারণা চালালেও তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দলের নেতা আবু জাফর মো. জাহিদ।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও এই আসনের বর্তমান এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য এ টি এম পিয়ারুল ইসলাম। এরইমধ্যে তিনি কোনোভাবেই নির্বাচন থেকে সরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী জোট প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এখানে মোটর প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইমদাদুল হক। মোটর প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।

এ ছাড়া মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া ২৯ আসনের মধ্যে পাঁচটিতে রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে এবারও মহাজোটের প্রার্থী করা হলেও ওই আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আসাদুজ্জামান বাবলু। এর আগে তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবার উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। পিরোজপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী মহাজোটের মনোনয়ন পেলেও ওই আসনে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফুর রহমান মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে আপেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার, গাইবান্ধা-১ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামীম হায়দার পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা বারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এমদাদুল হক এবং লক্ষ্মীপুর-২ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমানের বিরুদ্ধে কুয়েত আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বিদ্রোহী হিসেবে এখনও নির্বাচনি প্রচারণার মাঠে রয়েছেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে পুর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা একাধিবার জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরইমধ্যে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

সারাবাংলা/এইচএ/এমএম

আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর