Sunday 04 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অর্থ আত্মসাৎ
পিএফআই সিকিউরিটিজ পর্ষদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাসহ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের সিদ্ধান্ত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ মে ২০২৫ ২০:৩৩ | আপডেট: ৩ মে ২০২৫ ২২:৫১

ঢাকা: বিনিয়োগকারীদের ২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউস (ট্রেক নম্বর- ৭৯) পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেশত্যাগে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশমন (বিএসইসি)। একইসঙ্গে ব্রোকারেজটির পরিচালক ও কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাবসমূহ স্থায়ী অবরুদ্ধ করারসহ সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সেইসঙ্গে যোগসাজোস করে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পিএফআই সিকিউরিটিজের পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। সম্প্রতি পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও যাচাই বাছাই করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

গঠিত তদন্ত কামিটি ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মার্জিন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেগেটিভ ইক্যুইটিসহ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেতিবাচক ইক্যুইটি কেন বাড়ছে ও এর জন‌্য কারা দায়ী, নেতিবাচক ইক্যুইটির পরিমাণ, প্রভিশনস বা মার্জিন অ্যাকাউন্টের বিপরীতে রক্ষিত তহবিল, প্রভিশনসের ঘাটতি, মার্জিন অ্যাকাউন্টে অননুমোদিত লেনদেনসহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ) প্রতিষ্ঠানটির ২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা ঘাটতি পায়।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত পিএফআই সিকিউরিটিজের গ্রাহকের পাওনা হিসাবে ২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে। এরই ধরাবাহিকতায় ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কনসোলিডেটেড কাস্টমারস অ্যামাউন্টের ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠানটির সময় বৃদ্ধির আবেদন না-মঞ্জুর করা হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির ১৭ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন নবায়ন করেনি বিএসইসি। ফলে ওই সময় থেকে পিএফআই সিকিউরিটিজের স্টক-ডিলার এবং স্টক-ব্রোকার নিবন্ধন সনদ নবায়ন স্থগিত হয়ে যায়। এরপর ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সকল পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইওর ব্যাংক হিসাবের লেনদেন অবরুদ্ধ রাখার জন‌্য বাংলাদেশ ব‌্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদন অনুযায়ী পিএফআই সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি।

এদিকে ২০২০ সালের পর থেকে মশিহর সিকিউরিটিজ, তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ, বানকো সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস, সাবভ্যালি সিকিউরিটিজ, ডন সিকিউরিটিজ, ইনডিকেট সিকিউরিটিজ, সাদ সিকিউরিটিজ ও শাহ মোহাম্মদ সগির থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং জালিয়াতি ঘটে। এর পর ২০২২ সালে ২২ মার্চ বিএসইসির জারিকৃত নির্দেশনায়ে ডিএসই ও সিএসই সকল ব্রোকারেজ হাউস তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তদন্তসাপেক্ষে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতি পাওয়া যায়। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮৫ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে দ্রুত ঘাটতি সমন্বয় করতে বলা হয়। এর পর থেকে অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজ টাকা সমন্বয় করে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের ঘাটতি এখনো সমন্বয় করেনি। এর মধ্যে পিএফআই সিকিউরিটিজ অন্যতম।
বিএসইসির সিদ্ধান্ত: পিএফআই সিকিউরিটিজের উপর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে বিএসইসি। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত বিষয়গুলো সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিএসইসি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেগুলো হলো- সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে এনফোর্সমেন্ট প্রক্রিয়া গ্রহণের নিমিত্ত বিষয়টি কমিশনের এনফোর্সমেন্ট ডিভিশনে পাঠানো হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত পিএফআই সিকিউরিটিজের পরিচালকরা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাবসমূহের লেনদেন স্থায়ীভাবে স্থগিতকরণেএবং বিদেশ গমনে স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের নিমিত্ত জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ। অর্থ আত্মসাত (দ্যা প্যালেন কোড, ১৮৬০ এর সংশ্লিষ্ট ধারা ভঙ্গ) বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সারাবাংলা/জিএস/আরএস

পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেড বিএসইসি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর