হেফাজতের সেই ১৩ দফায় যা ছিল
৫ মে ২০২৫ ১০:১২
ঢাকা: ধর্মীয় নানান প্রেক্ষাপটে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সৃষ্টি হলেও মূলত ১৩ দফা দাবি ছিল দেশের মঙ্গলের জন্যই। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তা বুঝতে পারেননি বলে দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ১৩ দফা দাবি দেওয়া হলেও মূল দাবি ছিল শাহবাগে ইসলামের বিরুদ্ধে যেভাবে বিশোদগার করা হচ্ছিল তা বিলোপ করা। সরকার যদি অন্তত একটি দাবি মেনে শাহবাগে গড়ে ওঠা অনইসলামিক কার্কলাপ বন্ধ করতো তাহলে হয়তো সেদিন হেফাজতে ইসলাম সেই কঠোর সমাবেশের ডাক দিত না।
মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘সরকার কোনোভাবেই হেফাজতের কোনো দাবি মানতে রাজি হয়নি। কারণ, সরকার আওয়ামী লীগের হলেও সিদ্ধান্ত আসতো দিল্লি থেকে। দিল্লির কথায় ঢাকায় উঠবস করতো অনেকে। ফলে হেফাজতের বিরুদ্ধে মাঠে নামে সরকার। হেফাজত নেতাকর্মীদের নির্মূলে লেলিয়ে দেওয়া হয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। ফলে বাংলাদেশের সবাই দেখতে পেয়েছে।’
কী ছিল সেই ১৩ দফায়
১. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা।
২. আল্লাহ্, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।
৩. কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।
৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।
৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
৭. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।
৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।
৯. রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।
১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
১১. রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা।
১২. সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।
১৩. অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম