Saturday 31 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন বাংলাদেশ গড়তে জাপানের সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ মে ২০২৫ ১৫:৩৩ | আপডেট: ৩০ মে ২০২৫ ১৮:৪৩

টোকিওর জেট্রো সদর দফতরে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টা।

ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। এ লক্ষ্যে তিনি জাপানি কোম্পানিগুলির সহায়তা চেয়েছেন এবং দেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার (৩০ মে) জাপানে তার চলমান সফরের তৃতীয় দিনে টোকিওতে এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এই আহ্বান জানান। বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক স্বার্থসম্পন্ন জাপানি কোম্পানিগুলির কিছু শীর্ষ নির্বাহী উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার টোকিওর জেট্রো সদর দফতরে আয়োজিত সেমিনারে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে’।

জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) এবং জাইকা যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’-এর আয়োজন করে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা বড় বিপদের মধ্যে আছি। আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশ ১৬ বছরের একটি ভূমিকম্প পার করেছে। সবকিছু ভেঙে পড়েছে। আমরা এখন টুকরো টুকরো করে গুছিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।’

জাপানকে বাংলাদেশের বন্ধু আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন ভালো বন্ধু কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ায় এবং জাপান সেই বন্ধু।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো অসম্ভবকে সম্ভব করা এবং আপনি আমাদের সঙ্গী ও বন্ধু। এটি বাস্তবে রূপ দিন।’

নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা একটি ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা ইতিহাসকে দেখাতে চাই যে, এটি সম্ভব হয়েছে, তা-ও নিখুঁতভাবে।’

টোকিওতে এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্য একটি বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করুন, যাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলি। তাই আমাদের কাজ হচ্ছে একসাথে সেই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করা।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন,‘আপনাদের সহযোগিতায় এটি বাস্তবায়নযোগ্য এবং আমরা ইতোমধ্যে তার ভিত্তি স্থাপন করেছি’।

মাতারবাড়ি উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, এটি পিছিয়ে থাকা একটি দেশের অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এটি কেবল অর্থ উপার্জনের বিষয় নয়। এটি মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার ব্যাপার।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ আরো বহু মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের জন্য দরজার মতু যেমন নেপাল, ভুটান এবং ভারতের সাতটি উত্তরপূর্ব রাজ্যের মানুষ সমুদ্রের পথ পেতে পারে বাংলাদেশ হয়ে।’

তিনি বলেন, ‘মাতারবাড়ি হচ্ছে বাকি বিশ্বের জন্য দরজা। আমরা তাদের জন্য এই দরজা খোলা রাখবো।’

জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক পার্লামেন্টারি ভাইস মিনিস্টার তাকেউচি শিনজি বলেন, বাংলাদেশ হলো একটি কৌশলগত বিন্দু যা এশিয়াকে সংযুক্ত করে এবং এই অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন বাংলাদেশ ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে জাপান দেশটির উন্নয়নে সহায়তা করে আসছে।

তিনি আরো বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখতে চায় জাপান সরকার।

জাপানি সরকার দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে, জাপানি কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে বলেও জানান তাকেউচি।

ড. ইউনূস বলেন, জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করে টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ‘জীবনের চিহ্ন’ পেয়েছে এবং দেশের মেরামতের জন্য ‘শ্বাস নেওয়ার জায়গা’ পেয়েছে।
“আজ আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে আছি যখন আমাদের আপনার সমর্থন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমাদের প্রতিশ্রুতি হল একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা। আমরা পুরানো বাংলাদেশ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাই।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের এখন যেসব ত্রুটি ছিল তা শীঘ্রই দূর হবে। আমরা আশা করি এটি অতীতের বিষয় হয়ে যাবে। এটি জাতির জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ। আমরা সকলেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এবং আমরা এটিকে অতীতের বিষয় হিসেবে ধরে রাখতে চাই।’

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে জেট্রোর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নোরিহিকো ইশিগুরো বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের সুযোগ দেখেছে।’

জাপান বাংলাদেশ বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কমিটির (জেবিসিসিইসি) চেয়ারম্যান এবং মারুবেনি করপোরেশনের বোর্ড সদস্য এবং নির্বাহী করপোরেট উপদেষ্টা ফুমিয়া কোকুবু বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যবসা করা ৮৫ শতাংশ জাপানি কোম্পানি আশা করে যে এই বছর অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরিত হবে। তিনি কর বিধিমালায় সংস্কারেরও প্রত্যাশা করেছিলেন।’

বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত শিনিচি সাইদা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টিকে সুরক্ষিত করেছে তা হলো অর্থনীতি; কোনও প্রকল্প বন্ধ করা হয়নি এবং কোনও ব্যবসা স্থগিত করা হয়নি।’

বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মূলত টেক্সটাইল শিল্পভিত্তিক উল্লেখ করে তিনি আরো বিস্তৃত খাতে বিনিয়োগ বৈচিত্র্য আনার আহ্বান জানান।

সভায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং টোকিওস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী উপস্থিত ছিলেন।

আরও ছিলেন, সুমিতোমো কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শিঙ্গো উয়েনো; গোলটেবিল আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ইউগলেনা কোং লিমিটেডের সিইও মিতসুরু ইজুমো; জেরা-এর প্রধান বৈশ্বিক কৌশলবিদ স্টিভেন উইন; জেবিআইসির সিনিয়র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজুনোরি ওগাওয়া; ওনোডা ইনকর্পোরেটেডের সভাপতি শিগেয়োশি ওনোদা; জেট্রো-এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজুয়া নাকাজো; এবং আইডিই-জেট্রো-এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মায়ুমি মুরায়ামা।

সমাপনী বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।

সারাবাংলা/জিএস/এমপি

জাপান প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর