পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত এক ইজারাদারকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
রোববার (১ জুন) দুপুরে উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের ভাউলাগঞ্জ হাটে এই অভিযান পরিচালনা করে সেনাবাহিনীর একটি টিম।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন ইনজামামের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত হার থেকে বেশি হারে খাজনা আদায়ের সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমুদুল হাসান।
অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের প্রমাণ পাওয়ায় হাট ইজারাদার ও চিলাহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫৩ ধারায় এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ঘটনাস্থলেই এ জরিমানা আদায় করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটে খাজনার চার্ট দৃশ্যমান স্থানে টানানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। গরু-ছাগল বিক্রির সময় রশিদ প্রদান করা হলেও তাতে নির্ধারিত খাজনার হার উল্লেখ করা হয়নি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বাংলা ১৪৩২ সনে ভাউলাগঞ্জ হাটের মোট ইজারা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। হাটটি ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ। হাটটি সপ্তাহে দুই দিন—রবিবার ও বুধবার বসে এবং এটি দেবীগঞ্জ উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট হিসেবে পরিচিত।
জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত হার অনুযায়ী, প্রতি গরুর জন্য ক্রেতার কাছ থেকে ৪৫০ টাকা খাজনা নেওয়ার বিধান থাকলেও হাটে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। পাশাপাশি বিক্রেতার কাছ থেকেও ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়েছে। ছাগলের ক্ষেত্রে, ক্রেতার কাছ থেকে ১৩০ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও বিক্রেতার কাছ থেকে ১৫০ টাকা এবং ক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০০ টাকা ‘ঈদ বোনাস’ হিসেবে আদায় করা হয়েছে।
বড়শশী এলাকার রুপা নামে এক গরু ক্রেতা বলেন, “৫৮ হাজার টাকায় গরু কিনে আমার কাছে ৫০০ টাকা লেখাই বাবদ নিয়েছে, আর বিক্রেতার কাছ থেকেও ১০০ টাকা চাঁদা নিয়েছে।”
ডোমার উপজেলার আব্দুল জব্বার নামে আরেক ক্রেতা অভিযোগ করেন, “গরু কিনেছি ৭০ হাজার টাকায়, আমার কাছ থেকে ৬০০ টাকা, বিক্রেতার কাছ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়েছে।”
ইউএনও মাহমুদুল হাসান বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের সত্যতা পাওয়া গেছে। ইজারাদার তার দোষ স্বীকার করায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫৩ ধারায় তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ভাউলাগঞ্জ হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হলেও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। তবে এবারের এই অভিযান স্থানীয়দের মধ্যে প্রশাসনের প্রতি আস্থা বাড়াবে বলে মন্তব্য করছেন সচেতন মহল।