টাঙ্গাইল: কোরবানির ঈদ এলেই দেখা মেলে বাহারি নাম ও বিশাল আকৃতির গরুর। এ বারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। টাঙ্গাইলে কোরবানির হাট কাঁপাতে প্রস্তুত রয়েছে দেশীয় ষাঁড় ‘কালা বাবু’।
তিন বছরে বেড়ে ওঠা চার দাঁতের টাঙ্গাইলের দেশীয় ষাঁড় গরু কালাবাবু। সাড়ে ৪ ফুট উচ্চতার ১৪ মনের কালা বাবু প্রতিদিন ১০ কেজি তরল ও দানাদার খাবার খায়।
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার কোনরা গ্রামের কীটনাশক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ পরান মিয়ার ‘কালা বাবু’ গরুটি আসন্ন কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন।
সরেজমিনে টাঙ্গালের নাগরপুর উপজেলা কোনরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কালো রঙের গরুটি খুবই শান্ত প্রকৃতির। পুরো শরীরটাই কালো আর বিশাল দেহ হওয়ায় গরুটির নাম রাখা হয়েছে ‘কালা বাবু’। কালা বাবুকে এক নজর দেখতে গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কেউ ছবি তুলছেন কেউ ভিডিও করছেন।
দেখতে আসা লোকজন জানান, নাগরপুর উপজেলার কীটনাশক ব্যবসায়ী পরান মিয়ার দেশীয় ষাড় কালা বাবু জেলার সবচেয়ে বড় গরু।
কালা বাবুকে দেখতে আসা করিম মিয়া জানান, এখন পর্যন্ত নাগরপুরে পরান মিয়ার দেশীয় যাড় ‘কালা বাবু’ সবচেয়ে বড় গরু। কোরবানির পশুর হাটে এটি আকর্ষণীয় হবে। মালিক ভালো দামে গরুটি বিক্রি করতে পারবেন।
গরুর মালিক পরান মিয়া জানান, গ্রামের হাট থেকে থেকে দেশীয় জাতের গাভী ক্রয় করি। সে গুরু থেকে কালো রঙের একটি ষাঁড় বাছুর জন্ম নেয়। সেই ষাঁড় বাছুরকে আমি নিজের সন্তানের মত তিন বছর লালন পালন করে বড় গরুতে পরিণত করেছি। গরুটি দেখতে খুব শান্ত স্বভাবের হলেও বেশ চঞ্চল। শখ করে তার নাম রেখেছি ‘কালা বাবু’।
তিনি জানান, ষাঁড়টিকে বড় করতে কোনো ধরনের মোটাতাজাকরণ ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রয়েছে কাচা ঘাস, ভুসি, চালের কুড়া, ভুট্টা, অ্যাংকর, খৈলসহ প্রাকৃতিক খাদ্য ও বিচি কলা। তার পেছনে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে ৫০০ টাকা। কালা বাবুকে প্রতিদিন দুইবার গোসল করাতে হয়। গরমে আরামের জন্য ফ্যান ও মশা তাড়াতে দৈনিক ৪টি করে কয়েল জ্বালাতে হচ্ছে।
পরান মিয়া জানান, এবারের কোরবানির ঈদে কালা বাবু বিক্রি করে দেব। কেমন দাম চান? জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম ৫ লাখ টাকা। যে বা যারা কালা বাবুকে কিনতে চাইলে নিজেরাই দেখে শুনে দাম করে নিতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, আমার ইচ্ছে বাড়ি থেকে এই কালা বাবুকে বিক্রি করার। যদি না বিক্রি করতে পারি তাহলে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই গরুর হাটে উঠানোর ইচ্ছা আছে কালা বাবুকে।
পরান মিয়ার স্ত্রী মমতা বেগম জানান, আমার আপন সন্তানকে যেভাবে লালন পালন করেছি। ঠিক সেভাবে আমি কালা বাবুকে বড় করেছি। স্বামীর বয়স হয়েছে গরুটিকে দেখাশোনা করার জন্য কোন লোক নেই। সে কারণে বিক্রি করতে ইচ্ছে। খুবই মায়া হচ্ছে। তবুও বিক্রি করতে হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শহীদুল আলম জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জেলায় এ বছর ২ লাখ ১১ হাজার ৯৭৪ কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে ইতোমধ্যে কোরবানিযোগ্য ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭০টি পশু প্রস্তত করা হয়েছে। কালা বাবুর মত অসংখ্য নামে বড় বড় গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করে রেখেছে খামারিরা। আশা করছি, জেলার ছোট-বড় সব খামারিরা গবাদিপশু ভালো দামে বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হবেন।
তিনি আরও জানান, জেলার কোরবানি পশুর হাট গুলোতে মোট ৪৬ ভেটেনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে। হাটে কোনো পশু অসুস্থ বা রোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে মেডিকেল টিম চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে। এ ছাড়াও প্রতিটি হাটে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।