ঢাকা: রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে দেশে ফেরার সম্ভবনা তৈরি হয়েছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। সেই সুবাদে গত ঈদুল ফিতর এবং আসন্ন ঈদুল আজহা দেশর মাটিতে পালন করতে পারতেন তিনি। কিন্তু, কোনো এক অজানা কারণে দেশে ফিরছেন না তারেক রহমান। সঙ্গত কারণেই আসন্ন ঈদুল আজও যুক্তরাজ্যের লন্ডনেই পালন করবেন তিনি। বরাবরের মতো পরিবারের সদস্য এবং প্রবাসী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
দলীয় সূত্রমতে, সব মামলা থেকে খালাস পেলেও দেশের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে শিগগিরই দেশে ফেরা হচ্ছে না তারেক রহমানের। সে কারণে এবারের ঈদ তো বটেই আরও কতদিন তারেক রহমানকে প্রবাসজীবন কাটাতে হবে, সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ। ২০০৮ সাল থেকেই লন্ডনে ঈদ করতে হচ্ছে তাকে। গত ১৭ বছরে অন্তত ৩৫টি ঈদ বিদেশের মাটিতে কাটিয়েছেন তিনি। কন্যা জাইমা রহমান এবং স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে নিয়েই বিদেশ বিভূঁইয়ে ঈদ উদযাপন করে আসছেন তারেক রহমান। এবাও এর ব্যত্যয় ঘটছে না।
এদিকে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এবারই প্রথম দেশের বাইরে ঈদ করতে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চোখের চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অবস্থানরত মির্জা ফখরুলের ঈদ এবার থাইল্যান্ডের হতে পারে। ঈদের আগে তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা কম। সস্ত্রীক থাইল্যান্ডে অবস্থান করা বিএনপির মহাসচিবের ঈদ এবার থাইল্যান্ডেই হতে পারে।
সম্প্রতি চোখে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসকদের দেখান। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, চোখের রেটিনায় দ্রুত একটি অস্ত্রোপচার জরুরি। চিকিৎসকদের পরামর্শে ব্যাংককের রুটনিন আই হসপিটালে দ্রুত যোগাযোগ করা হয়। গত ১৩ মে চোখের জরুরি চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৫ মে তার চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের ১৬ দিন পর ১ জুন দেশে ফেরার কথা থাকলেও বিএনপির মিডিয়াসেল থেকে জানানো হয়, তার দেশে ফেরা এক সপ্তাহ পেছানো হয়েছে।
দলীয় সূত্রমতে, আগামী শুক্রবার (৬ জুন) চিকিৎসকরা চোখ পরীক্ষার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ছাড়পত্র দেবে। অর্থাৎ শুক্রবার জানা যাবে, কবে দেশে ফিরবেন তিনি। পরের দিন শনিবার (৭ জুন) বাংলাদেশে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। সেই সুবাদে ধরে নেওয়া যায়, থাইল্যান্ডেই এবার ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন বিএনপির মহাসচিব। সাধারণত, দেশে থাকলে ঢাকায় ঈদ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কোনো কোনো ঈদ নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়েও করেন তিনি।
জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহাসচিব কোথায় ঈদ করবেন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আগামী শুক্রবার (৬ জুন) চিকিৎসকরা তাকে দেখবেন। তাদের কাছ থেকে ছাড়পত্র পেলে তবেই দেশে ফিরতে পারবেন। যেহেতু শনিবার (৭ জুন) ঈদ, সেহেতু মহাসচিবের পক্ষে দেশে এসে ঈদ করাটা অসম্ভব মনে হচ্ছে।’
এদিকে বিএনপির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া যথারীতি গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় এবার ঈদুল আজহা পালন করবেন। শরীর ভালো থাকলে রাতে দলের শীর্ষ নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ দিতে পারেন তিনি। ভাই-বোনের পরিবারের সদস্যরাও আসতে পারে তার বাসায়।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কেউ ঢাকায় কেউ বা নিজের এলাকায় ঈদ করবেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) হাফিজ, সেলিমা রহমান ঢাকায় ঈদ করবেন। ড. মঈন খান ঈদ করবেন নিজ জেলা নরসিংদীতে, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঈদ করবেন চট্টগ্রামে।
নজরুল ইসলাম খান চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড আছেন। ঈদের আগেই তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি থাইল্যান্ডেই আছেন, দেশে ফেরেননি। সুতরাং তার ঈদ দেশে, না বিদেশে— সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
দলের অন্যান্যা নেতারা তাদের সুবিধা মতো জায়গায় ঈদ করবেন। তবে, নির্বাচনী আবহ তৈরি হওয়ায় এবার বেশিরভাগ নেতা নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করবেন। যে যেখানেই ঈদ করেন না কেন, দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সাধারণ মানুষ বিশেষ করে দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগা-ভাগি করে নিতে। আর সাধ্যমতো দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করতে।