ঢাকা: আজ বৃহস্পতিবার ৫ জুন শুরু হয়েছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। আরাফাতের ময়দানে লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে ‘তালবিয়া’— লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।
হিজরি ১৪৪৬ সনে এ বছর হজ পালিত হচ্ছে। আজ ৯ জিলহজ, হাজিরা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন। সূর্যাস্তের পর তারা মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হবেন। মুজদালিফায় পৌঁছে সেখানে রাতযাপন করবেন এবং শয়তানকে পাথর মারার জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ভোর থেকে সৌদি আরবের মক্কা নগরীর আরাফার আদিগন্ত মরু প্রান্তর এক অলৌকিক পুণ্যময় শুভ্রতায় ভরে উঠেছে। সফেদ-শুভ্র দুই খণ্ড কাপড়ের এহরাম পরিহিত হাজিদের অবস্থানের কারণে সাদা আর সাদায় একাকার। পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই পবিত্র হজ পালন করেছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত লাখ লাখ হাজি মক্কার পার্শ্ববর্তী মিনায় অবস্থান করছেন। হাজিদের জন্য এখানে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন তাঁবু প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা আলাদা তাঁবু রয়েছে। হাজিরা তাঁদের নিজ নিজ তাঁবুতে নামাজ, দোয়া ও অন্যান্য ইবাদত পালন করছেন।
আজ ফজরের পর গোটা দুনিয়া থেকে আগত ২৫ লক্ষাধিক মুসলমান ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে উপস্থিত হচ্ছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা ৮৭ হাজারের বেশি। আজ ৮ জিলহজ মূল হজের দিন তারা এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এরপর তারা প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হবেন।
হজযাত্রীরা আরাফার ময়দানে মসজিদে নামিরা থেকে প্রদত্ত হজের খুতবা শুনবেন। এখানে তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ একত্রে আদায় করেন। এটি ‘উকুফে আরাফা’ নামে পরিচিত, যা হজের অন্যতম ফরজ আমল। সূর্যাস্তের পর হাজিরা মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হন, যেখানে তারা মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করেন এবং রাতযাপন করেন।
১০ জিলহজে, হাজিরা মুজদালিফা থেকে মিনায় ফিরে আসেন এবং বড় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করেন। এরপর পশু কোরবানি করেন এবং মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেঁটে সাধারণ পোশাক পরিধান করেন। এরপর তারা কাবাঘর তাওয়াফ করেন এবং সাফা-মারওয়ায় সাঈ (চক্কর) সম্পন্ন করেন।
১১ ও ১২ জিলহজে, হাজিরা মিনায় অবস্থান করেন এবং প্রতিদিন শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করেন। শেষে, তারা বিদায়ী তাওয়াফ করে মক্কা ত্যাগ করেন।
হজের খুতবা বাংলায় অনুবাদ করবেন চার বাংলাদেশি: প্রতি বছরের মতো পবিত্র হজের খুতবা এবারও বাংলাসহ বহু ভাষায় অনুবাদ করা হবে। বাংলায় অনুবাদ করবেন চার জন বাংলাদেশি। তারা হলেন ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান, মুবিনুর রহমান ও নাজমুস সাকিব। তারা সবাই মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন।
এদিকে, সৌদি কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি কর্মী নিয়োজিত করেছে এবং ৪০টিরও বেশি সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির হজমন্ত্রী তৌফিক রাবিয়া।
ইতোমধ্যে ৫০ হাজার বর্গমিটার অতিরিক্ত ছায়াযুক্ত জায়গা তৈরি, হাজার হাজার চিকিৎসা কর্মীর মোতায়েন এবং ৪০০টির বেশি শীতলীকরণ ইউনিটের ব্যবস্থা।
আনাদোলু বার্তার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত হিজরি বছর (১৪৪৫ হিজরি / ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে) হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৪ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ২১ হাজার ৮৫৪ জন ছিলেন সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ হজযাত্রী। হজমন্ত্রী জানান, ওই বছর হজে অংশ নিয়েছিলেন বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশের মানুষ।
এ বছর ১২ বছরের নিচের শিশুদের হজে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে এবং যেসব হজযাত্রী অনুমতিপত্র ছাড়া হজ পালনের চেষ্টা করবেন, তাদেরকে ৫ হাজার ডলার (৩,৬৮৫ পাউন্ড) জরিমানা ও ১০ বছরের জন্য সৌদি আরবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
তারা আরও জানান, গত বছর যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ছিলেন অবৈধ বা নিবন্ধনবিহীন। ফলে তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আবাসন, পরিবহন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন, যখন তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। মৃতদের মধ্যে শত শত মিশরীয় ও ইন্দোনেশীয়ও ছিলেন।
হজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এবং এটি হিজরি চন্দ্রপঞ্জিকার ১২তম মাসে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকলে জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ।
হজের প্রথম দিনে পুরুষ হজযাত্রীরা নিজেদের পোশাক বদলে সাদা রঙের দুই টুকরা কাপড় (ইহরাম) পরে ইহরামের অবস্থায় প্রবেশ করেন। নারীরা শালীন পোশাক পরিধান করে মাথা ঢেকে নেন।
এরপর হজযাত্রীরা ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা শরিফ ঘিরে তাওয়াফ (তিনবার চক্কর) দেন। পাশাপাশি তারা সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার হাঁটেন, যাকে সাঈ বলা হয়।
পরে তারা মক্কা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের মিনায় গমন করেন, যেখানে তাঁবুর শহরে তারা রাত কাটান। বৃহস্পতিবার তারা আরাফাত ময়দানে যাবেন, যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বিদায় হজের খুতবা দিয়েছিলেন।
আজ পবিত্র হজ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৫ জুন ২০২৫ ১২:০৫
৫ জুন ২০২৫ ১২:০৫
সারাবাংলা/এনএল/এমপি