Monday 16 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতের ফুলবাড়ীর বিক্ষোভে বাংলাবান্ধায় থমকে গেল পাথরের ট্রাক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৭ জুন ২০২৫ ০০:০৫ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ ০০:০৮

নতুন জটিলতায় স্থবিরতা দেখা গেছে বন্দর এলাকা জুড়ে।

পঞ্চগড়: বিভিন্ন দাবিতে ভারতের অভ্যন্তরে ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে শ্রমিক ও সিঅ্যান্ডএফ সদস্যদের আন্দোলনের কারণে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি ভুটান থেকে আমদানি করা বোল্ডার পাথরের ট্রাক। ভারতের নতুন এই জটিলতায় স্থবিরতা দেখা গেছে বন্দর এলাকা জুড়ে।

সোমবার (১৬ জুন) সকাল থেকে এ অবস্থা বিরাজ করছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরের ইয়ার্ডজুড়ে ট্রাকশূন্যতা বিরাজ করছে। ভারতের এমন জটিলতায় দীর্ঘ সময় ধরে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের অবসরে বসে থাকতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, ঈদের ১০ দিনের সরকারি ছুটি শেষে রোববার (১৫ জুন) থেকে আবারও সচল হয়েছে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। চালুর প্রথম দিনেই ভুটান থেকে ২০টি ট্রাকে বোল্ডার পাথর আমদানি হয় এবং বাংলাদেশ থেকে নেপালে ১১টি ট্রাকে পাট রফতানি করা হয় এ বন্দর দিয়ে।

বিজ্ঞাপন

তবে পুরোপুরি কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার আগেই দ্বিতীয় দিনে নতুন এক জটিলতা তৈরি হয়েছে এ স্থলবন্দরে। ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক ও সিএনএফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা আন্দোলনে নামায় সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভুটান থেকে আমদানি করা কোনো বোল্ডার পাথরের ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেনি।

ব্যবসায়ী ও বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের ৪ মে সর্বশেষ ৪৬টি ভারতীয় পাথরের ট্রাক বাংলাবান্ধা বন্দরে প্রবেশ করে। তবে অতিরিক্ত দাম রাখা এবং নিম্নমানের পাথর সরবরাহ করায় পরদিন ৫ মে থেকে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের আমদানিকারকরা। তবে তখনও স্বাভাবিক ছিল ভুটান থেকে পাথর আমদানি।

এদিকে সোমবার সকাল থেকে ভারতের ফুলবাড়ী ২ বর্ডার লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, ফুলবাড়ী এক্সপোর্টার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, ফুলবাড়ী ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশন ও ফুলবাড়ী সিএনএফ অ্যাসোসিয়েশন বিভিন্ন দাবিতে ফুলবাড়ী বন্দরের সড়কে অবস্থান নেয়। ফলে ভুটান থেকে পাথরবাহী ট্রাকগুলো আটকে পড়ে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, ভারতের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভুটানি ট্রাক যেন ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে সরাসরি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, আগে তা ভারতের ফুলবাড়ী বন্দরে নামাতে হবে এবং সেখান থেকে ভারতীয় গাড়িতে করে বাংলাদেশে নিতে হবে।

এ বিষয়ে বন্দরের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ‘ভারতের এই আন্দোলন অযৌক্তিক। আমরা যখন ভুটান থেকে আমদানি করি, তখন সব ধরনের শুল্ক-কর পরিশোধ করেই আমদানি করি। ভুটানের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও রয়েছে। কিন্তু তারা দাবি করছে, পণ্য আগে ভারতে নামাতে হবে, তারপর তাদের গাড়িতে বাংলাদেশে নিতে হবে। এতে আমাদের খরচ বেড়ে যাবে এবং লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’

বন্দরের সিএনএফ এজেন্ট সুমন আল মামুন বলেন, ‘দুদিন পরপর তারা নতুন নতুন দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামে। কিছুদিন আগে স্লট বুকিং নিয়ে আন্দোলন করেছে। দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাদ দিয়ে তারা আন্দোলনমুখী হয়ে উঠেছে। ভারতীয় পাথরে অতিরিক্ত মাটি ও দাম থাকায় আমরা ভুটান থেকে আমদানি করছি। তারা ভালো মানের পাথর দিলে আপত্তি থাকতো না। এখন উলটো ভুটানের পাথর ঠেকিয়ে আমাদের লোকসান করছে।’

বন্দরের শ্রমিক নেতা বদিউজ্জামান বাবুল বলেন, ‘এই বন্দরে প্রায় ১ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সবাই বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। ভারত একের পর এক কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে, যা শ্রমিকদের আয়ে বড় প্রভাব ফেলছে। আমরা চাই দ্রুত এ সমস্যা সমাধান হোক এবং দুই দেশের সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।’

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঈদের ছুটি শেষে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। ভারতীয় পাথর আমদানি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। তবে ভুটান থেকে নিয়মিত পাথর আসছিল। এখন শুনছি, ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ না করলে ভুটানি ট্রাককেও ঢুকতে দিচ্ছে না। এমন দাবিতে আন্দোলন চলছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।’

সারাবাংলা/এইচআই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর