ঢাকা: ল্যাবএইড হাসপাতালে রাহিব রেজার (৩১) নামের এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সনদ পাঁচ বছরের জন্য স্থগিত করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)।
রোববার (২২ জুন) বিএমডিসির শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ইসমাইল পাটোয়ারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গতকাল শনিবার বিএমডিসির সাধারণ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে আগামী পাঁচ বছর তিনি কোনো রোগী দেখতে পারবেন না।
এর আগে, ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রাহিব রেজার মৃত্যু হয়। পেটে গ্যাসজনিত সমস্যার কারণে রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের কাছে যান রাহিব রেজা। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ল্যাবএইডে এন্ডোস্কোপি করানোর পরামর্শ দেন ডা. স্বপ্নীল। এরপর রাহিব রেজাকে ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খালি পেটে ল্যাবএইড হাসপাতালে আসতে বলা হয়। যথাসময়ে তিনি হাসপাতালে এলেও এন্ডোস্কপি শুরু হয় রাত ১১টার দিকে। এর দেড় ঘণ্টা পরও রোগীকে বাইরে না আনা হলে একজন জোর করে এন্ডোস্কোপি রুমে ঢুকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান। এরপর অবস্থা জটিল হলে রাহিব রেজাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
২০২৪ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তদন্ত কমিটির রিপোর্টে রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ও তার টিমের বিরুদ্ধে গুরুতর চিকিৎসা অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। একইসঙ্গে ল্যাবএইড হাসপাতালের এন্ডোস্কোপি ব্যবস্থাপনার ত্রুটি পাওয়া গেছে।
সে সময় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাহিব রেজার শারীরিক প্রাক-পরীক্ষা মূল্যায়নের জন্য ডাক্তার স্বপ্নীল ও তার চিকিৎসক টিমের প্রয়োজনীয় পেশাগত দায়িত্ব ও উপযুক্ত দক্ষতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। এন্ডোস্কোপি টিমের দেওয়ার তথ্য অনুযায়ী তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ছিল না। এন্ডোস্কোপি রুমে প্রবেশ এবং অসুস্থতার পর আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া ছিল দীর্ঘ। তবে আইসিইউতে রোগীর চিকিৎসা যথাযথ ছিল। সব ব্যবস্থাপনার পর রাহিবের মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল নেতৃত্বে ডা. সুনান বিন ইসলাম ও ডা. মো. নাসিফ শাহরিয়ার ইসলামের অংশগ্রহণে ৮ সদস্যের টিম চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাহিব রেজার এন্ডোস্কোপি করেন। চারদিন পর এন্ডোস্কোপি পরবর্তী জটিলতায় ১৯ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন রোগী। এমনকি চেতনানাশক প্রয়োগ করে এন্ডোস্কোপি করার জন্য রাহিব রেজা একজন উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তার ওজন বেশি ছিল ১২২ কেজি, তার অস্বাভাবিক ইসিজি এবং হৃদরোগ ছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রোগীর এন্ডোস্কোপি পরীক্ষার পূর্বে প্রাক-পরীক্ষা মূল্যায়ন এবং সতর্কতা পর্যাপ্ত ছিল না। রোগীর নিজের বা তার আইনি অভিভাবকের কাছ থেকে একটি বৈধ সম্মতিপত্র নেওয়ার পরিবর্তে ল্যাবএইড এন্ডোস্কোপি টিম রোগীর বন্ধুর স্বাক্ষরিত সম্মতিপত্র গ্রহণ করেছে। এমনকি একজন ঝুঁকিপূর্ণ রোগীকে চেতনানাশক ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে এন্ডোস্কোপি পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ চিকিৎসক নিশ্চিত করা হয়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে, গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন বিভাগের অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের নিবন্ধন বাতিল করতে বিএমডিসিকে নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।