শরীয়তপুর: কৃষি ব্যবস্থায় কারিগরি জ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার একটি মাচা পদ্ধতিতে ছাগল মোটাতাজাকরণ। এই পদ্ধতি একদিকে যেমন খামারিদের স্বাবলম্বী করছে, অন্যদিকে উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সহায়তা করছে।
পিকেএসএফ এর অর্থায়নে শরীয়তপুর জেলায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি (নুসা)। নুসা থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এ পর্যন্ত ৪০টি পরিবার মাচা পদ্ধতিতে ছাগল মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পেরেছেন। এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ছাগল মোটাতাজাকরণ একটি অত্যন্ত লাভজনক উদ্যোগ। এই পদ্ধতিতে অল্প সময়ের মধ্যে উপযুক্ত খাদ্য ও বাসস্থান নিশ্চিত করে মোটাতাজা করা সম্ভব।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর অর্থায়নে এবং নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি (নুসা)-এর তত্ত্বাবধানে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ৪০টি পরিবারকে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, তাদের খাসির খাবার ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে, যা তাদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় মাচা পদ্ধতিতে ছাগল মোটাতাজাকরণ অনেক পরিবারের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে। এই পদ্ধতির সুবিধাভোগীদের মধ্যে ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের রহিমা বেগম ও ঘড়িষার ইউনিয়নের লিটন জমাদ্দার সাফল্য পেয়েছেন।
রহিমা বেগম তার সংসারে সচ্ছলতা আনতে নুসা (নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি) থেকে ছাগল মোটাতাজাকরণের দুই দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর তার ছেলে আব্দুর রহিমকে ৮টি ছাগল দিয়ে এই কাজ শুরু করান। অল্প দিনেই তারা সফলতা পান। আগে খোলা স্থানে ছাগল পালন করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়েন। এখন তারা মাচা পদ্ধতিতে অনেক বেশি ছাগল পালন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের খামারে ছাগলের সংখ্যা ৮টি থেকে বেড়ে বর্তমানে ২৫টিতে দাঁড়িয়েছে। গত কোরবানি ঈদে তারা ১০টি ছাগল ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন।
একইভাবে, ঘড়িষার ইউনিয়নের সিংহমুড়ি গ্রামের লিটন জমাদ্দার মাত্র ৫টি ছাগল দিয়ে শুরু করে এবারের ঈদে অন্তত ২০টি ছাগল বিক্রি করে সফল হয়েছেন।
রহিম ও লিটনের মতো সফল খামারিদের দেখে এখন অনেকেই মাচা পদ্ধতিতে খাসি মোটাতাজাকরণ করে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে এই কাজে যুক্ত হচ্ছেন। এই উদ্যোগ গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং স্থানীয়দের স্বাবলম্বী করে তুলছে।
খামারি আব্দুর রহিম ও লিটন জমাদ্দার উভয়েই মাচা পদ্ধতিতে খাসি মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে তাদের সফলতার কথা তুলে ধরেছেন। তারা বলেন, “পিকেএসএফ এর অর্থায়নে এবং নুসা (নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি)-এর সার্বিক সহযোগিতা পেয়েই আমরা মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করে লাভের মুখ দেখেছি।”
তারা আরও জানান, নুসা থেকে তারা বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় উপকরণ, ওষুধ এবং নগদ আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। তাদের এই সফলতা দেখে স্থানীয় অনেকেই এখন মাচা পদ্ধতিতে ছাগল মোটাতাজাকরণে আগ্রহী হচ্ছেন, এবং কেউ কেউ এরই মধ্যে কাজ শুরুও করে দিয়েছেন। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
নড়িয়া উন্নয়ন সমিতির প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুজ্জামান বলেছেন, এ পদ্ধতিতে ফলে মাচায় থাকা ছাগল রক্ষা পাবে বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে। অন্যদিকে মাটিতে জমে থাকা মল থেকে জ্বালানি তৈরি করা যায়। এছাড়া বিভিন্ন শাক-সবজি চাষেও এটি সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি দ্রুত ছাগল বড় হয়ে উঠে। এছাড়াও সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাংস উৎপাদন হয়।
নড়িয়া উন্নয়ন সমিতির যুগ্ম পরিচালক কবির হোসেন বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও গৃহপালিত প্রাণির নিরাপদ বাসস্থান হিসেবে মাচা পদ্ধতিতে ছাগল মোটাতাজাকরণের জন্য পিকেএসএফ এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় নুসার কৃষি ইউনিটের বাস্তবায়নে নড়িয়ার ৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।