Tuesday 01 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাইয়ের দিনলিপি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটার বিরুদ্ধে কর্মসূচি শুরু

ফারহানা নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ জুলাই ২০২৫ ০৮:০৫ | আপডেট: ১ জুলাই ২০২৫ ১০:০৭

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ২০২৪ সালের ১ জুলাই। বৈষম্যের বিরুদ্ধে, সমতার পক্ষে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে গর্জে ওঠে ছাত্রদের কণ্ঠস্বর। চাকরিতে ওই সময়ে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শুরু হয় একযোগে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ।

আন্দোলনের পটভূমি

চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। তাদের দাবি ছিল, এই ব্যবস্থা মেধাভিত্তিক নয়, বরং এটি অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্যদের অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকৃত প্রতিযোগীদের বঞ্চিত করছে। বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ অন্যান্য সংরক্ষিত কোটার আওতায় একটি বড় অংশ বরাদ্দ থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিজ যোগ্যতায় চাকরির সুযোগ থেকে পিছিয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

বিজ্ঞাপন

একযোগে পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

১ জুলাই সকাল থেকেই দেশের পাঁচটি বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও স্লোগান হাতে ক্যাম্পাসে মিছিল করে। ঢাবির টিএসসি থেকে রাজু ভাস্কর্য, জাহাঙ্গীরনগরে আমতলা, জগন্নাথে গেট এলাকা, চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও রাজশাহীতে চারুকলার সামনে মূল বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তাদের মুখে স্লোগান ছিল—‘মেধার মান দাও, কোটার অবসান চাও’, ‘সমান সুযোগ, ন্যায্য অধিকার’।

৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

এদিন থেকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। কর্মসূচির মধ্যে ছিল-

  • বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
  • মানববন্ধন ও রেলপথ অবরোধের হুমকি
  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্যাম্পেইন চালানো
  • আর বুধ ও বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ঢাকার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে একত্র হবেন বলে জানানো হয়।

সরকারের অবস্থান

সরকারের তরফে তখনও সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া না আসলেও প্রশাসনিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। ছাত্রদের এই সমবেত কণ্ঠ সরকারের উচ্চমহলে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। কিন্তু সে সময় পর্যন্ত মুখোমুখি কোনো অবস্থানে যায়নি সরকার। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রতিদিনই ছিল রাজপথে। পর্যবেক্ষণ করছিল আন্দোলন।

এই আন্দোলনের তাৎপর্য

এই আন্দোলন প্রমাণ করে শিক্ষার্থীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন এবং সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ। এটি ছিল কেবল কোটা সংস্কার নয়, বরং সমতার প্রশ্নে একটি নৈতিক প্রতিবাদ।

২০২৪ সালের ১ জুলাইয়ের এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল একটি শক্তিশালী বার্তা— কোনো ব্যবস্থাই যদি মেধাকে অবমূল্যায়ন করে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে সমাজে হতাশা ও বিভাজন সৃষ্টি করে। তাই শিক্ষার্থীদের ওই প্রতিবাদ শুধু সেদিনের জন্যই নয়, ভবিষ্যতের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হয়ে রয়েছে।

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

কর্মসূচি শুরু কোটার বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর