Monday 11 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ৮২ ইন্সট্রাক্টরের পদোন্নতি, মাঠ পর্যায়ে অসন্তোষ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১১ আগস্ট ২০২৫ ২২:৫৩

ঢাকা: হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অমান্য করে পিটিআই জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতি দেওয়ায় মাঠপর্যায়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গেল ৩১ জুলাই হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। অথচ, ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে একই পদে কাজ করছেন প্রাইমারি এডুকেশন ট্রেনিং সেন্টারের (পিইটিসি) অনেক ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টর। পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই বৈষম্যের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সারা দেশের উপজেলা, জেলা এবং রাজধানীর ইউআরসি বা টিআরসি ইনস্ট্রাক্টররা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ১০ থেকে ১২ বছরের জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদায়ন করায় এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয়। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জুনিয়র পিটিআই প্রশিক্ষকদের পদায়ন স্থগিত করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এরপরও গত ৩১ জুলাই হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জুনিয়র পিটিআই প্রশিক্ষকদের পদোন্নতি দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে গাইবান্ধার ইউআরসি ইনস্ট্রাকটর রবিউল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে আমরা অবহেলিত। পদোন্নতিতে পিটিআই ইনস্ট্রাকটকরদের ৮০ শতাংশ ও ইউআরসি ইনস্ট্রাকটর ২০ শতাংশ পদোন্নতি দেওয়া হয়। এটি বৈষম্যমূলক। এটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। কোর্টে এই বৈষম্য রোধে দুটি মামলা রয়েছে। কোর্ট এই পদোন্নতির বিষয়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। কিন্তু দুটি মামলায় স্টে থাকা অবস্থায়ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং পদোন্নতিপ্রাপ্তরা পিটিআইতে যোগদান করেছেন।

রবিউল ইসলাম আরও বলেন, ২৫ বছর ধরে একই পদে কাজ করছেন। অনেকে ১৫ থেকে ২৫ বছর ধরে পদোন্নতি ছাড়াই চাকরি করছেন। তিনি এই বৈষম্যের অবসান চান।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টর মহিউদ্দিনও একই ধরনের অসন্তোষ প্রকাশ করে এই বৈষম্যের প্রতিকার চেয়েছেন।

জানা গেছে, পিটিআই-এর অধীনে থাকা এই ইউআরসিগুলোর ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির বিষয়ে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও গত ৩১ জুলাই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার ৮২ জন পিটিআই ইনস্ট্রাক্টরকে সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট পদে পদোন্নতির চিঠি জারি করেন। এতে ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টরদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়।

আদালতের আদেশ অমান্য করে এই পদোন্নতির প্রতিবাদে বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩ আগস্ট হাইকোর্ট পুনরায় স্থগিতাদেশ জারি করেন। তবে, হাইকোর্টের দ্বিতীয় দফা স্থগিতাদেশের পরেও পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ৪ আগস্ট কাজে যোগদান করেন। চাকরিবিধি এবং আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করে এমন বৈষম্যমূলক পদায়নের ফলে সারা দেশের ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টররা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ ঘটনায় মাঠ পর্যায়ে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরদের পক্ষে হাইকোর্টে ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ ২৩৫১ নম্বর রিট পিটিশন দাখিল করেন জাকির হোসেন। ২য় মামলার বাদী রবিউল ইসলাম। যার নম্বর ১০৮৪৪,২০২৪। এই মামলা দুটির বিবাদী ৮২জন পিটিআই ইন্সট্রাক্টরকে সহকারি সুপারিনটেনডেন্ট, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) পদে পদোন্নতি দিয়েছে, যারা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অধীনে পিটিআইতে কর্মরত রয়েছেন। আবেদনকারীরা ৩১ জুলাই ওই পদোন্নতি এবং নিয়োগ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগের কাছে আবার আবেদন করেন। কারণ এটি আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠতা অস্বীকার করে করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ ৩১ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সার্কুলারের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।

আদালতের ওই আদেশ অনুসারে, সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট পদে ৮২জন পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের যোগদানের বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। অথচ হাইকোর্টের রিট পিটিশনের আদেশ অমান্য করে ৩১ জুলাই পদায়ন দেওয়া হয়েছে ৮২ জন কর্মকর্তাকে। এরপর আবারও ৩ আগস্ট হাইকোর্টে আরেকটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয়। সেখানেও ওই পদায়নকে স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। পরপর দুইটি আদেশকে অমান্য করে ৪ আগস্ট ৮২ জন কর্মকর্তা কাজে যোগদান করল সেটি রিসিভ করে ৬৭জন পিটিআই সুপারগণও আদালত অবমাননা করেছেন বলে জানায় পদায়নের বিরোধীতাকারী কর্মকর্তারা।

মামলার বাদী পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ইউআরসির ইন্সট্রাক্টর জাকির হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ কারণে তিনি পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তার মতে, এ ধরনের ঘটনা ‘জুলাই বিপ্লবকে’ অবমাননা করা হয়েছে।

জাকির হোসেন আরও বলেন, যে উদ্দেশ্যে দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করে নতুন বাংলাদেশ গঠন করেছিল, সেখানে এমন বৈষম্যমূলক পদায়ন কাম্য নয়। যেহেতু উভয় ইন্সট্রাক্টর অধিদফতরের অধীন, তাই সচিব ও মহাপরিচালকের সুবিবেচনা কামনা করেন।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এসআর

অসন্তোষ নির্দেশ অমান্য পদোন্নতি