Tuesday 12 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মৌচাক থেকে উদ্ধার মরদেহের পরিচয় মিলেছে, পরিবারের অভিযোগ ‘হত্যা’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ আগস্ট ২০২৫ ১৫:৪৪ | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৫ ১৬:২৩

মিজান ও জাকির হোসেন।

ঢাকা: রাজধানীর মৌচাকে ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলের পার্কিং থেকে উদ্ধার হওয়া দুই ব্যাক্তির মরদেহের পরিচয় মিলেছে। তবে পরিবারের অভিযোগ, তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন-নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার লটপটিয়া গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে জাকির হোসেন। আর দক্ষিণ গোমাতলী গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে মিজানুর। এর আগে, সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে তাদের দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিহতের স্বজনরা এসব অভিযোগ করেন।

মর্গে নিহত মিজানুরের ভাগিনা মো. রিয়াদ বলেন, ‘আমার মামা আগে গ্রামে বালুর ব্যবসা করতেন। তবে সেই ব্যবসা বাদ দিয়ে আপাতত মাছের খামার করছিলেন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। জাকির আর মিজানুর দুই বন্ধু। জাকির প্রাইভেটকার চালাতেন আর প্রায়ই মিজানুরকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন এবং তাকেও গাড়ি চালানো শেখাতেন। শনিবার (১০ আগস্ট) রাতেই তারা দুইজন, গাড়ির মালিক ও মালিকের স্ত্রীর বড় ভাই (সম্বন্ধী) গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। তার সম্বন্ধীর দেশের বাইরে যাবেন, ওইদিন রাতে তার ফ্লাইট ছিল। বিমানবন্দর থেকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে আসেন তিনি। একজন রোগীকে নিয়ে পরদিন গ্রামে ফেরার কথা ছিল তাদের। এরপর কি হয়েছে আমরা জানি না। তবে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে এটা বুঝতে পেরেছি।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে নিহত জাকিরের বাবা কৃষক মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমার ছেলের কারো সঙ্গে কোনো ঝগড়া নাই। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কারা তাকে মেরেছে তাও জানি না। তবে গত দুই বছর আগে অ্যামেরিকা যাওয়ার জন্য এলাকার এক দালালকে টাকা দিয়েছিলাম। সেই দালাল তাদেরকে নিয়ে এসেছিল ঢাকায় পল্টনে এক ট্র্যাভেল এজেন্সির ফজলু নামে এক ব্যক্তির কাছে। সব মিলিয়ে তখন প্রায় ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এরপর জাকিরকে শ্রীলঙ্কা নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে অবৈধ পথে অ্যামেরিকা পাঠানোর কথা ছিল। তবে তখন সেটি পারেনি। এরপর আরও কিছু টাকা দিয়ে তাকে আমরাই দেশে ফেরত আনি।’

তিনি বলেন, ‘এরপর থেকে ফজলুর কাছে সেই টাকা ফেরত চাইতে গেলে সে কিছুদিন পর টাকা ফেরত দেবে বলে জানায়। এরপর বহুবার তার পেছনে ঘুরেও টাকা ফেরত পাচ্ছিলাম না। এই টাকা চাওয়ার কারণে তারা আমার ছেলেকে একবার মারধরও করেছিল। সবশেষ কিছুদিন আগে এলাকাতে দালালের সঙ্গে কথা হয় এবং স্ট্যাম্পে সই করে যে, চলতি মাসের ১০ তারিখে সেই টাকা ঢাকায় এজেন্সিতে এসে ফেরত দেবে। কিন্তু ওই ১০ তারিখেই জাকিরকে মেরে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনা তারাই ঘটিয়েছে বলে আমাদের ধারণা। এছাড়া আর কেউ এটি করতে পারে না।’

প্রাইভেটকারের মালিক জোবায়েদ আল মাহমুদ সৌরভ জানান, মৃত দুইজন ও তার বাড়ি একই উপজেলায়। ১১ বছর ধরে গাড়ির ব্যবসা করেন তিনি। তিন মাস ধরে তার প্রাইভেটকার ভাড়ায় চালান জাকির হোসেন। শনিবার ইতালি যাবে দেখে রাতে গাড়িতে করে সম্বন্ধীসহ তারা চারজন ঢাকায় আসেন। তাকে বিমানবন্দর নামিয়ে দিয়ে ওই তিনজন মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে যান। সেখানে তাদের গ্রামের এক রোগী ভর্তি আছেন। তাকে রোববার সকাল ১১টায় ছুটি দেওয়ার কথা ছিল। শনিবার ভোরে হাসপাতালে পোঁছানোর পর মালিক সৌরভ সিদ্ধান্ত নেন, তিনি বাসে করে গ্রামে চলে যাবেন। আর জাকির ও মিজানুর সকালে রোগীসহ গ্রামে ফিরবেন। সেই কথামতোঁ তিনি বাসে করে চলে আসেন আর ওই বাসের টিকিট কেটে দেন জাকির।

এরপর রোববার (১০ আগস্ট) বিকেলে প্রথম তিনি জাকিরকে ফোন দেন গাড়ি নিয়ে ফিরেছেন কিনা জানার জন্য। কিন্তু তার ফোন রিসিভ হচ্ছিল না। এরপর থেকে অনেকবার ট্রাই করেও জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। পরদিন অর্থাৎ সোমবারও (১১ আগস্ট) যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। সোমবার বিকেলে তিনি ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এর আগে অর্থাৎ সোমবার বিকেলে ৩টার দিকে রমনা থানা পুলিশ তাকে ফোন দিয়ে জানায়, হাসপাতালের পার্কিংয়ে তার গাড়ির ভেতর থেকে দুইজনের মরদেহ পাওয়া গেছে।

এর আগে, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রমনা থানা পুলিশ। প্রতিবেদনে উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন উল্লেখ করেন, তাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ফোলা ও ফোসকা পড়া। এ ছাড়া, মুখ লালচে ফোলা ও রক্তমাখা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের মৃত্যুর কোনো কারণ উল্লেখ নেই প্রতিবেদনে।

সারাবাংলা/এসএসআর/এসডব্লিউ

নিহত ২ মরদেহ উদ্ধার মৌচাক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর