Sunday 17 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভালো আর ব্যক্তিগত সম্পর্কের’ খাতিরে ৮০ কোটি টাকা আত্মসাতে নারী ব্যবসায়ী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৪৮ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৫ ২০:২৯

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আকিজ উদ্দীন; মাঝখানে চট্টগ্রামের আসকার দিঘীর পাড়ে ‘লা এরিস্টোক্রেসি’ রেস্টুরেন্টের মালিক নাজমে নওরোজ – কোলাজ সারাবাংলা (ছবি: সংগৃহীত)

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের সঙ্গে ছিল ‘ভালো সম্পর্ক’। আর তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আকিজ উদ্দীনের সঙ্গে ছিল ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক’। এতেই ঋণের নামে এস আলমের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন রেস্তোঁরার মালিক নাজমে নওরোজ নামক একজন নারী। পরে আবার সেই টাকা কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করেন।

অনুসন্ধানে পরস্পর যোগসাজশের মধ্য দিয়ে ৭৯ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৪ টাকা আত্মসাৎ এবং গোপনে পাচারের সত্যতা পেয়ে রোববার (১৭ আগস্ট) মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আফরোজা হক খান চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেছেন।

বিজ্ঞাপন

দুদকের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সুবেল আহমদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, দুদক আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অভিযোগ করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তার পিএস আকিজ উদ্দীন, নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ে ‘লা এরিস্টোক্রেসি’ রেস্টুরেন্টের মালিক নাজমে নওরোজ, ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী, নগরীর কাজির দেউড়ি মহিলা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক নাজমা মালেক ও হুমায়রা সাঈদা খানম।

আসামিদের মধ্যে ১১ জন নগরীর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। এরা হলেন- জেড আর জে সার্ভে কোম্পানির মালিক শফিকুল করিম, মিশকাত ট্রেড সেন্টারের মিশকাত আহমেদ, আরিফ হাসনাইন রাবার সাপ্লাইয়ারের মো. আরিফ হাসনাইন, নুর ট্রেডার্সের জসিম উদ্দিন, মেসার্স মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের জুয়েল মিয়া, রিমঝিম শাড়ি হাউজের জুয়েল মিয়া, মেসার্স আগমন এন্টারপ্রাইজের এরসাদ সিকদার, এম এইচ এন্টারপ্রাইজের মনিরুল হক (৪৬), নিউ বসুন্ধরা জুয়েলার্সের যিশু বণিক, মেসার্স আল মদিনা স্টিলের মো. আলমগীর ও মেরিন ফিশের মাহবুবুল হক।

এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহ আলম, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং মোহাম্মদ ইকবাল ফারুকের নাম আসামির তালিকায় আছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নাজমে নওরোজ ২০০৮ সালে নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ের এসএস খালেদ রোডে লা-এরিস্টোক্রেসি’ রেস্তোঁরাটি চালু করেন। ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ওই রেস্তোঁরার নামে তিনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কাজীর দেউরি মহিলা শাখায় একটি হিসাব নম্বর চালু করেন। ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের কথা বলে ঋণের আবেদন করেন। সেদিনই ২ কোটি টাকা পাঁচ বছর মেয়াদী ঋণের প্রস্তাব শাখা থেকে প্রধান কার্যালয়ের কর্পোরেট ব্যাংকিং বিভাগে পাঠানো হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ১১৬তম সভায় ঋণ অনুমোদন করা হয়।

দুদক নথি পর্যালোচনায় পেয়েছে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গ্রাহকের চলতি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৫০ লাখ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী এ সীমার মধ্যেই তাকে ঋণ দেওয়ার কথা। কিন্তু ২০১৫ সালে সীমা অতিক্রম করে তাকে ১ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার ২২০ টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সাল থেকেই নাজমে নওরোজকে ঋণসীমা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ঋণ দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়। ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেড় কোটি টাকা ঋণসীমার বিপরীতে তাকে ৭৪ কোটি ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৪৫ টাকা অতিরিক্ত ঋণ দেওয়া হয়। আর ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তার নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৯ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৪ টাকা।

নথি পর্যালোচনায় দুদক আরও জানতে পেরেছে, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নাজমে নওরোজের নামে ছাড় করা ঋণের টাকা তিনি নগদে উত্তোলন করে ১১ টি প্রতিষ্ঠান ও ৩ জন ব্যক্তির ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করেন। মামলায় এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে নাজমে নওরোজের দুদককে দেওয়া বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, এস আলমের পুরো পরিবার অর্থাৎ সাইফুল আলম মাসুদ ও তার মা, স্ত্রী সন্তান এবং ভাই-বোনদের সঙ্গে নাজমে নওরোজের ‘ভালো সম্পর্ক’ ছিল। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক ছিল। এছাড়া সাইফুল আলম মাসুদের ব্যক্তিগত সহকারী আকিজ উদ্দিনের সঙ্গে ছিল ‘ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক’।

এর ফলে নাজমে নওরোজকে ঋণসীমার বিপরীতে অতিরিক্ত ঋণ দেওয়া হলেও ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ নীরব ছিলেন। মূলত এস আলমের সঙ্গে সুসম্পর্কের সূত্রেই তিনি ঋণের অপব্যবহার করেন। তিনি ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে প্রতীয়মান হয়েছে, ব্যাংক মালিকের বিশেষ আগ্রহে নাজমে নওরোজকে ঋণ দেওয়া হয় এবং সেই ঋণ আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্নজনের হিসেব নম্বরে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেন।

অবশ্য গত জানুয়ারিতে ১২৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাইফুল আলম মাসুদ ও আকিজ উদ্দীনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে আলাদা দুটি মামলা করেন নাজমে নওরোজ। এসব মামলা আদালতের নির্দেশে তদন্তাধীন আছে।

সারাবাংলা/আরডি/আরএস

৮০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক রেস্তোঁরার মালিক নাজমে নওরোজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর