Monday 18 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিলেন প্রধান বিচারপতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ আগস্ট ২০২৫ ২১:৫৪ | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৫ ০০:৪০

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ

ঢাকা: দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

রোববার (১৭ আগস্ট) সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে ‘এস্টাবলিশিং কমার্শিয়াল কোর্টস: শেপিং দ্য ড্রাফ্ট কমার্শিয়াল কোর্ট অর্ডিন্যান্স’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ প্রস্তাব দেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলোকে ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। এর ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটি কারো একক কোনো দাবি নয়। বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছেন।

বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। এসব দেশের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।

এ সময় প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার, এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আদালত প্রতিষ্ঠার পর বিচারকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেও জানান সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, মিশ্র আইনব্যবস্থার সুফল কাজে লাগানো হবে এবং বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। এটি আমাদের জন্য এক অনন্য সুযোগ। শুধু একটি নতুন আদালত গঠন নয়। বরং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের জন্য এক নতুন ভিত্তি গড়ে তোলা। আজ আমরা সম্মিলিতভাবে সেই পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করছি।

সেমিনারের দ্বিতীয় সেশন বা মূল পর্বে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির রেসিডেন্সিয়াল রিপ্রেজেনটেটিভ স্টিফান লিলার ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ।

এছাড়া সেমিনারে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি, বিডার প্রতিনিধি, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তা, বিজ্ঞ আইনজীবী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেমিনারে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতির ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের প্রশিক্ষণ শাখা থেকে গত ১৩ আগস্ট এ সংক্রান্ত সরকারি আদেশ জারি হয়।

সারাবাংলা/আরএম/এসএস

পৃথক প্রতিষ্ঠা প্রধান বিচারপতি প্রস্তাব বাণিজ্যিক আদালত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর