Wednesday 20 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সন্তান হারিয়েছি, আর কী জিজ্ঞেস করবেন: হাসিনার আইনজীবীকে সাক্ষী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২০ আগস্ট ২০২৫ ২১:০০ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৫ ২২:৩৫

ঢাকা: ‘আমার একমাত্র ছেলে শহিদ হয়েছে। ছেলেটা ১০ পারা কোরআনের হাফেজ ছিল। খুব আদরযত্নে তাকে বড় করে তুলেছি। কিন্তু তারা বাঁচতে দিলো না। ছেলে হারানোর যন্ত্রণা আমি বুঝি। আপনি কী বুঝবেন। সন্তান আমার হারিয়েছে, আপনাদের না। আমি সন্তান হারিয়েছি, আপনি আর কী জিজ্ঞেস করবেন।’

জেরার সময় কান্নাকণ্ঠে এভাবেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনকে বলেন সোনিয়া জামাল। তিনি শহিদ শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা।

বুধবার (১৮ আগস্ট) জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন সোনিয়া। ১৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।

বিজ্ঞাপন

জবানবন্দিতে সোনিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে রাজধানীর গেন্ডারিয়া উইল পাওয়ার স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বয়স ছিল ১৪ বছর। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছেলেটি শহিদ হয়। আমার ছেলে ১০ পারা কোরআনে হাফেজ ছিল। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেতো সে; যা আমি জানতাম না। আমি নিজেও অংশ নেই। ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাস্তার পর জুনায়েদ আমাকে বলে- ‘মা আমি আমার বন্ধু সিয়ামকে নিয়ে আন্দোলনে গেলাম। কিছুক্ষণ পর মেয়ে নাফিসা নাওয়ালকে সঙ্গে নিয়ে রিকশায় চড়ে আমিও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য রওনা দেই।’

আন্দোলনে যাওয়ার পথেই সোনিয়াদের রিকশা আটকে দেয় পুলিশ। জানতে চাইলে মৃত আত্মীয়কে দেখতে যাচ্ছেন বলে পুলিশকে জানান তিনি। এরপরই তাকে যেতে দেওয়া হয়। আইডিয়াল স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছালে ফের তাদের রিকশা থামিয়ে দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে রিকশা থেকে নেমে মেয়েকে নিয়ে হেঁটেই আন্দোলনে অংশ নেন তিনি।

জুনায়েদের মা বলেন, ‘দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে আমরা আন্দোলনে পৌঁছাই। এক ঘণ্টা পর মোবাইলে দেখি অনেকগুলো কল এসেছে। কলগুলো ছিল আমার ছোট ভাই আসিফের। আমাকে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলে আসিফ। জুনায়েদ মাথায় ব্যথা পেয়েছে বলেও জানানো হয়। তখন মেয়েকে নিয়ে বাসায় চলে আসি আমি। ভাসুরের কক্ষে ঢুকে দেখি আমার ছেলেকে বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। তার চোখের বাম পাশে গুলি লেগে মাথার পেছন দিয়ে বড় গর্ত হয়ে বের হয়ে গেছে। অনেক রক্ত বের হচ্ছিল। তা দেখে আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি।’ এসব কথা বলেই সাক্ষীর ডায়াসে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানতে পারি ওই দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটের অপর পাশে ফুটপাতের ওপর গুলিবিদ্ধ হয়ে জুনায়েদ মারা যায়। তার বন্ধু সিয়াম ও আব্দুর রউফ তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক বলেন- ‘সে আগেই মারা গেছে’। তারা আমার ছেলের লাশ আমার বাসায় নিয়ে আসে। আসরের পর আমার ছেলের লাশ ধূপখোলা মাঠে জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আমি আমার স্বামীর কাছে জেনেছি যে, সেখানে শাহরিয়ার খান আনাস নামের আরেকজন শহিদের জানাজা হয়েছে। আমার ছেলে ও তাকে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।’

সোনিয়া বলেন, ‘ডিএমপির পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমারের নির্দেশে চানখারপুল এলাকার নবাব কাটরা এলাকায় এডিসি আক্তারুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ কনস্টেবল সুজন, ইমাজ, নাসিরুল বেপরোয়া গুলি চালিয়ে আমার ছেলে জুনায়েদ, আনাস, ইয়াকুব, রাকিব, ইমতিয়াজ ও মানিককে হত্যা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব জানতে পারি। এছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। আমার সন্তানকে গুলি করার একটি ভিডিও আমাকে দিয়েছেন আব্দুর রউফ।’

এ সময় ভিডিওটি ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়। সেখানে জুনায়েদের লাশ শনাক্ত করেন সাক্ষী। লাশের বাম চোখে রক্তাক্ত ব্যান্ডেজ দেখা যায়। ঠিক তখনই কান্নায় ভেঙে পড়েন সোনিয়া। এরপর তাকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্সের আইনজীবী আমির হোসেন। জেরার একপর্যায়ে নিজের সন্তান হারানোর কথা তুলে আইনজীবীকে প্রশ্ন ছুড়ে সাক্ষী বলেন, ‘আমি সন্তান হারিয়েছি, আপনি আমাকে আর কী জিজ্ঞেস করবেন-করেন। জবাবে আমির হোসেন বলেন, ‘আমরাও মর্মাহত। কিন্তু পেশার জায়গা থেকে আমাদের কিছু প্রশ্ন করতেই হয়।’

সারাবাংলা/আরএম/এসআর

ট্রাইব্যুনাল

বিজ্ঞাপন

যশোরে মশাল মিছিল
২০ আগস্ট ২০২৫ ২২:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর