ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজা শহরের দখল ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি পরিকল্পিত স্থল আক্রমণের আগে প্রায় ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা ডাকা হয়েছে। বুধবার (২০ আগস্ট) বিবিসির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
একজন সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই রিজার্ভ সেনারা সেপ্টেম্বরে দায়িত্বের জন্য রিপোর্ট করবে এবং এই অভিযানের জন্য বেশিরভাগ সৈন্যই নিয়মিত বাহিনীর সদস্য হবেন। পরিকল্পনার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সৈন্যরা ইতিমধ্যেই জেইতুন এবং জাবালিয়া এলাকায় কাজ করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ মঙ্গলবার এই পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। এই সপ্তাহের শেষে তা নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় পেশ করা হবে।
গাজা শহরের কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েলের এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে তাদের অনেক মিত্র দেশ। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বুধবার সতর্ক করে বলেন, এটি শুধুমাত্র উভয় জনগণের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং পুরো অঞ্চলকে একটি স্থায়ী যুদ্ধের চক্রে ঠেলে দেবে।’
এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (ICRC) বলেছে, ‘আরও স্থানচ্যুতি এবং সংঘাতের তীব্রতা গাজার ২১ লাখ জনসংখ্যার জন্য ইতোমধ্যেই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করার ঝুঁকি তৈরি করবে।’
গত মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির বিষয়ে পরোক্ষ আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েলের সরকার পুরো গাজা উপত্যকা জয় করার ইচ্ছা প্রকাশ করে।
মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার এবং মিশর এই আক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই একটি চুক্তি করার চেষ্টা করছে। তারা ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় জিম্মি থাকা প্রায় ৫০ জনের মধ্যে অর্ধেককে মুক্তির জন্য একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। হামাস সোমবার জানিয়েছে যে তারা এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে।
ইসরায়েল এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মঙ্গলবার জানান, তারা আর কোনো আংশিক চুক্তি মেনে নেবেন না। তারা এমন একটি ব্যাপক চুক্তি দাবি করছেন, যেখানে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে মাত্র ২০ জন এখনো জীবিত আছেন।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘অপারেশন গিডিওন্স শ্যারিয়টস-এর পরবর্তী ধাপ’ এর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে ডাকার আদেশ জারি করা হয়েছে। এই অভিযান গত মে মাসে শুরু হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে তারা গাজার কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ ছাড়াও, ২০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে তাদের বর্তমান দায়িত্বের সময় বাড়ানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস পরিচালিত ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় এই অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এরপর থেকে গাজায় কমপক্ষে ৬২ হাজার ১২২ জন নিহত হয়েছেন।