রংপুর: স্কলারশিপ দেওয়ার কথা বলে নারী শিক্ষার্থীদের ‘অনৈতিক কাজের কুপ্রস্তাব’ দেওয়ার অভিযোগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) স্থাপিত জার্মানভিত্তিক একটি প্রকল্পের ‘কোর্স ইন্সট্রাক্টর’ পদ থেকে রংপুর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রহমত আলীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানভিত্তিক সংস্থা কিক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। শনিবার (২৩ আগস্ট) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী।
তিনি বলেন, রহমতের বিরুদ্ধে নারীঘটিত একটি অভিযোগ ওঠে। তখন সংস্থাটি কোর্স ইন্সট্রাক্টর পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করে। তারা মিটিং করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেহেতু তার নিয়োগ, বেতন সবকিছুই সংস্থাটি বহন করে। এখন তারা অন্য ইন্সট্রাক্টর নেবেন।
এর আগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রহমত আলীর একাধিক স্ক্রিনশট ফাঁস হয়। সেখানে দেখা যায় তিনি এক নারী শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপের প্রলোভন দেখিয়ে বলছেন, ‘তোমার প্রতি আমার প্রবল আকর্ষণ, আই নিড ইউ, নরমালি আমার প্রেমিকাকেও আমি না ছুঁতে প্রতিজ্ঞ, জানি না তুমি কীভাবে নাও, আমি সত্যিই তোমাকে কামনা করি, আমার সঙ্গে থাকবে তো?’ ইত্যাদি মেসেজ দিতে দেখা যায়।
এ ছাড়াও কোর্স ইন্সট্রাক্টর হলেও নিয়মিত ক্লাস না করানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তিনি ক্লাসের চেয়ে রাজনীতিতে বেশি সক্রিয়। সারাদিন প্রোগ্রাম আর আন্দোলন নিয়েই থাকেন তিনি। দিনের পর দিন তিনি ক্লাসে অনুপস্থিত।
তার কোর্সের শিক্ষার্থী সৈয়দ আলী বলেন, ‘রহমত আলী নিয়মিত ক্লাসে আসতেন না। নিজের ইচ্ছেমতো আসতো।
এ বিষয়ে রহমত আলী দাবি করেন— পুরোটাই ষড়যন্ত্র। এগুলো এডিট করে তৈরি করা হয়েছে।
সম্প্রতি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের দাবিতে আমরণ অনশনে আন্দোলনের আড়ালে ছাত্রলীগের সাবেক একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া রহমত আলীসহ বেশ কয়েকজন সমন্বয়কের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে দরকষাকষির অভিযোগ উঠে। ইউজিসি পদক্ষেপের পর আন্দোলনকারীদের একাংশ অনশন প্রত্যাহার করে নিলেও রহমত আলীর নেতৃত্বে অনশন চালিয়ে যান।
সূত্র জানায়, এসব সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীরা অনশনের আড়ালে প্রশাসনকে চাপে ফেলে কয়েকজন সমন্বয়ককে চাকরি দিতে সেসময় অনশন চালিয়ে যান। অনশন না করেও অনশনের নেতৃত্ব থাকা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মান ভিত্তিক কিক স্কলারশিপ প্রোগ্রামে চাকুরি করতেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নিয়োগে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পিএ পদে আবেদনও করেন রহমত। রহমতসহ আরো বেশ কয়েকজন আন্দোলনকে ব্যবহার করে চাকুরি নিশ্চিত করতে চেয়েছিল বলে আন্দোলনে থাকা আরেকটি পক্ষ দাবি করেন।
সেসময় রহমত আলী বরাবরের মতো সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, এসব বানোয়াট। তিনি সহযোদ্ধাদের সংহতি জানানোর জন্য আন্দোলনে অংশ নেন।
এর আগে গত বছরের ২৪ নভেম্বর ইমতিয়াজ আহম্মদ ইমতিকে আহ্বায়ক ও রহমত আলীকে সদস্যসচিব করে ১২২ সদস্য বিশিষ্ট রংপুর মহানগর কমিটি অনুমোদন দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। কমিটি গঠনের পর থেকেই আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মামলা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের অভিযোগ তোলেন অন্যান্য নেতাকর্মীরা। গত ১৮ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ–বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে রংপুর মহানগর কমিটির ১১ জন নেতা পদত্যাগও করেন। এসব অভিযোগও তিনি সেসময় অস্বীকার করেছিলেন।