Sunday 24 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বড় চ্যালেঞ্জ: সিপিডি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৪১ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৫ ১৯:০৯

– ছবি : সিপিডি

ঢাকা: দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আন্তর্জাতিক তহবিল ও দেশীয় বিনিয়োগ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

সংস্থাটি বলেছে, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণ করতে ৩৫.২ থেকে ৪২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। নীতিমালার অসঙ্গতি ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তার কারণে এই লক্ষ্য অর্জন হুমকিতে পড়তে পারে।

রোববার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ ‘এনডিসি ৩.০: ফর দ্য পাওয়ার সেক্টর: ইজ বাংলাদেশ সেটিং অ্যাম্বিশাস টার্গেটস’ শীর্ষক এক সংলাপে এসব কথা বলেছে সংস্থাটি। সংলাপে দুটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। সিপিডি’র গবেষণা সহকারী মেহেদী হাসান শামীম উপস্থাপন করেন ‘এনডিসি ২.০ বাস্তবায়নের অগ্রগতি’ বিষয়ক গবেষণা। অপর গবেষণা উপস্থাপন করেন হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি, যেখানে ২০৪০ সালের মধ্যে জলবায়ু লক্ষ্য পূরণে উপযুক্ত জ্বালানি মিশ্রণ ও প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ বিশ্লেষণ করা হয়। সংস্থার গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সেশন পরিচালনা করেন।

বিজ্ঞাপন

সিপিডি বলেছে, সরকারের জ্বালানি পরিকল্পনার অসামঞ্জস্যতার ফলে একদিকে দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির উদ্বৃত্ত সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে লক্ষ্য থাকলেও নবায়নযোগ্য খাতে বিশাল ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে না পারলে জলবায়ু অভিযোজন ও নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে যাবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলে দেশের বিদ্যুৎ খাত আরও বেশি কার্বন নির্ভর হয়ে পড়বে, যা আন্তর্জাতিক জলবায়ু প্রতিশ্রুতি অর্জনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ফলে নবায়নযোগ্য খাতে আন্তর্জাতিক তহবিল, দেশীয় বিনিয়োগ এবং কার্যকর নীতির সমন্বয় ছাড়া জলবায়ু লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।

মেহেদী হাসান শামীম বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় নীতি পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য ভিন্ন ভিন্ন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব লক্ষ্যে বাস্তবতাকে পাশ কাটানো হয়েছে। মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যানে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০২৫-এ ২০৪০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্য ৩০ শতাংশ। আবার সমন্বিত বিদ্যুৎ জ্বালানি মহাপরিকল্পনায় (আইইপিএমপি) ২০৪০ সালের মধ্যে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ শতাংশ।

‘পরিচ্ছন্ন জ্বালানি’ সংজ্ঞার সমালোচনা করে সিপিডি বলেছে, যেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ ও কার্বন ক্যাপচারের মতো অপ্রমাণিত প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে ২০৪১ সালের লক্ষ্য পূরণের মাত্র ৯ শতাংশ প্রচলিত নবায়নযোগ্য উৎস-সৌর ও বায়ু থেকে আসবে। এদিকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে নবায়নযোগ্য জ্বালানি যুক্ত হয়েছে মাত্র ৩.৬ শতাংশ, যেখানে গ্যাসভিত্তিক জীবাশ্ম জ্বালানির সক্ষমতা ৪৩.৪ শতাংশ। এছাড়া আমদানিকৃত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাও সমানতালে বাড়ছে।

সংস্থাটির হিসাবে, সরকারের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রয়োজনীয় নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা হতে হবে ১৮ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট। অথচ বর্তমান পরিকল্পনায় রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৯৬৭ মেগাওয়াট, যা আগামী পাঁচ বছরে ১৬ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি ঘাটতি তৈরি করবে।

গবেষণায় প্রধানত বিনিয়োগ চ্যালেঞ্জের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে সিপিডি। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বাংলাদেশকে ২০৪০ সালের নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্য পূরণ করতে মোট ৩৫.২ বিলিয়ন (আমদানি বাদে) থেকে ৪২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন ২০২৫-২০৩৫ সময়কালে, প্রায় ২৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সৌর বিদ্যুতে ১৬.৫ বিলিয়ন ডলার, বায়ু বিদ্যুতে ১২.৬ বিলিয়ন ডলার, জলবিদ্যুতে ৬ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “বাংলাদেশ যদি নীতিগত অস্পষ্টতা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বজায় রাখে, তবে আর্থিক সংকট ও জলবায়ু লক্ষ্যে ব্যর্থতার ঝুঁকি বাড়বে। অন্যদিকে, ঐক্যবদ্ধ ও স্মার্ট কৌশল গ্রহণ করলে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সফল রূপান্তর করতে পারবে। এখনই সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।”

সংলাপে প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ সলিমুল্লাহ, ফাহমিদা খানম, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের চেয়ারম্যান রেজওয়ান খান, বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস এসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমরান করিম, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মির্জা শওকত আলীসহ প্রমুখ।

সারাবাংলা/আরএস

নবায়নযোগ্য জ্বালানি সিপিডি সংলাপ