Monday 25 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি কারাগারে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৫ আগস্ট ২০২৫ ১০:০৯ | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৫ ১২:২৭

বিএসএফের হাতে আটক হয়েছেন আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান।

রংপুর: অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে আটক হয়েছেন আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান। রোববার (২৪ আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গের এক আদালত ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে তাকে।

শনিবার (২৩ আগস্ট) রাতে পশ্চিমবঙ্গের ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানকে আটক করে বিএসএফ। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বরূপনগর থানা এলাকার বিথারী সীমান্তে তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার পশ্চিমবঙ্গের স্বরূপনগর থানার হেফাজতে তাকে দীর্ঘক্ষণ জেরার পরে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী। রোববার তাকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন।

রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (হেড কোয়ার্টার্স) হাবিবুর রহমান জানান, মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানের বাড়ি নীলফামারীতে। এতোদিন ছিলেন পলাতক, যিনি গত বছরের ৫ আগস্টের আগে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং পরে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায় অবস্থিত এপিবিএন-২–এর সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে, তিনি তার নতুন কর্মক্ষেত্রেও যোগ দেননি। এ বছর ১৪ই আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ প্রজ্ঞাপন মারফত তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

আরও পড়ুন: আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বিএসএফ’র হাতে আটক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাইদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তিনি। তিনি সেইসময় ছিলেন কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করেছে কে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। গুলি করার সময় সেখানে পুলিশের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে হেলমেট পরা তাদের একজন পুলিশকে গুলি করতে বলেছেন, এমন দৃশ্য ভিডিওতে দেখা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনার দিন রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) আরিফুজ্জামানকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। তিনি এক কনস্টেবলের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছেন।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান গুলি ছুড়েছেন।

সেদিন ঘটনাস্থলে গুলি ছুড়ছেন আরিফুজ্জামান।

পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান আরও জানান, মো. আরিফুজ্জামান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে শহিদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। ওই মামলায় ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠনের পর সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এর মধ্যে ছয়জন গ্রেফতার আছেন।

এ ছাড়াও, আরিফুজ্জামান রংপুর মহানগর তাজহাট থানায় শহিদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার চার নম্বর, কোতয়ালী থানায় কলা ব্যবসায়ী শহিদ মেরাজুল ইসলাম হত্যা মামলার ২১ নম্বর, একই থানায় সবজি ব্যবসায়ী শহিদ সাজ্জাদ হোসেন হত্যা মামলার ১৬ নম্বর আসামি। এ ছাড়াও, কোতয়ালী থানায় কলেজ শিক্ষার্থী জিম হত্যা চেষ্টা মামলার পাঁচ নম্বর ও পল্লী চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকি হত্যা চেষ্টা মামলার দুই নম্বর আসামি তিনি।

রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী জানান, ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সব থেকে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই জিলা স্কুল মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ লাইন্স মোড়ে শিক্ষার্থীদের মিছিল আটকে দিয়ে বেধড়ক লাঠিচার্জে নেতৃত্ব দেন তখনকার সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান। এ ছাড়াও, শহিদ আবু সাঈদকে গুলি করার আগে এবং পরে খুব কাছে থেকে নির্দেশ দেন আরিফ এবং নিজেও গুলি করেন।

দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যেহেতু ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন অনুপ্রবেশের দায়ে। সেখানে কি মামলা হয় সেটা আগে দেখতে হবে। এরপর এটা দুই দেশের মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। মন্ত্রণালয় টু মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা তার বিষয়ে মামলা এবং অন্য নথিপত্রগুলো যথাযথভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠিয়েছি।’

পুলিশ জানায়, গত বছর ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সিটি বাজার সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত কলা ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন হত্যা মামলায় বাদির কাছ থেকে কৌশলে হলফনামা করে নাম কেটে করে নেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সারাবাংলা/এসডব্লিউ

আবু সাঈদ আসামি কারাগারে হত্যা মামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর