বগুড়া: আমরা সত্যিই একটা দুর্নীতিগ্রস্ত জাতি বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি যখন কথাটা বলি তখন যারা সরকারে বসেন তারা কষ্ট পান। কিন্তু সত্যটা যদি স্বীকার না করি। শুধরাবো কি করে?’
সোমবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘নাগরিক অধিকার ও জলবায়ুর ন্যায্যতা’ শীর্ষক এক প্রকল্পের উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘কিভাবে আমরা দুর্নীতির বাইরে আসতে পারি এটা আমাদের দেখতে হবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে একটা পর্যায় পর্যন্ত এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কিন্তু এটার গভীরের স্তরে আমরা যেতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ আমাদের থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে এবং প্রায় সময় আমার কাছে এসে বলে, আপনারা থাকতে সব করে যান। এর পরে তো আর হবে না। তিনি প্রশ্ন করেন, এই বাক্যের অর্থটা কি? এটা যদি ন্যায্য হয় কেন হবে না? তারা যদি সত্যি জনগণের প্রতিনিধি হয়, কেন হবে না যদি দাবিটি একটি ন্যায্য দাবি হয়? কারণ, একটাই দেশটা আমার খণ্ডবিখণ্ড হয়ে গেছে।
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘১৩৫টি শিশু শহিদ হয়েছে, আর ১১ জন নারী শহিদ হয়েছে। শহিদের যে ধারাবাহিক সংজ্ঞা আমি এতকাল দেখে এসেছি। আমাদের ’৫২ এর শহিদ, ’৭১ এর শহিদ এর ভেতরে ২৪ এ আমাদের একটা বিশাল সংখ্যক মেয়েরা আহতের অংশ, নিহতের অংশ এবং শহিদের সংজ্ঞাটা আজকে পাল্টে গেছে। এটা শুধু একটি ছেলের চেহারা নয়, একটি শিশুর চেহারা, একটি মেয়ের চেহারা। একটা মুহূর্তের জন্যও আমরা এটা ভুলবো না।
জাতিসংঘ বলেছে, ‘পনেরোশ’ এর ঊর্ধ্বে প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা গেছে। আমরা সেটা শনাক্ত আজও করে উঠতে পারিনি। শনাক্ত করতে না পারার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। যেগুলো গণহত্যা হয়েছে, গণকবর হয়েছে, সেগুলোর ডিএনএ’র কাজ কিছু কিছু হয়েছে। কিছু কিছু এখনও বাকি আছে। শনাক্তের পর নিশ্চয়ই সেই নামগুলোও গ্যাজেটে অন্তর্ভুক্ত হবে। আমরা ৮০০ এর বেশি নাম গ্যাজেট করেছি এবং সেগুলোকে ধরেই আমরা কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘যুগে যুগে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই দেশ সংগ্রাম করে এসেছে। অথচ গণতন্ত্র আমাদের বাইরেই থেকে গেল। চব্বিশও তাই। আমি একাত্তর দেখেছি, ২৪ দেখেছি। আমি দুটো যুদ্ধকেই দেখি আমার ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা, গণতন্ত্রের তৃষ্ণা, সমতার স্বপ্ন এবং বৈষম্যের নিষ্ঠুর হাত থেকে বাঁচার একটা চেষ্টা। আমরা লড়াইটা লড়ছি।’
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই প্রজন্মের শিশুদের হালকাভাবে নেবেন না। এই প্রজন্মের শিশুরা অনেক পালটে গেছে। তারা জগত দেখে ফেলেছে। যেভাবে, আমরা আমাদের সময়ে সেভাবে দেখিনি। তারা আত্মবিশ্বাসের জায়গায়, দুঃশাসনের জায়গায় অনেকদূর এগিয়ে গেছে। তারা মরণকেও ভয় পায় না, জীবনকেও ভয় পায় না। এরকম একটা প্রজন্মকে নিয়ে অসাধ্য সাধন করা যায়। তাই এই প্রজন্মকে আমাদের খুব যত্নশীলভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে।‘
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা, সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম মোফাখখারুল ইসলাম, সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রকনুল হক, বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রেজাউল হাসান রানুসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের সদস্যরা।