ঢাকা: জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পৃথক দুটি পোস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের একাংশকে নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তার মতে, গত দেড় দশক ধরে দেশি-বিদেশি এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে, যার মূল দায়ভার শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর বর্তায়।
“হাসিনা তুই খুনি, বাংলার মাটিতে তোর বিচার হবে”
ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম কঠোর ভাষায় শেখ হাসিনাকে ‘খুনি’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “হাসিনা তুই খুনি। এই বাংলার মাটিতে তোর বিচার হবে। হাজার মায়ের বুক তুই খালি করেছিস, হাজার সন্তানকে বাবা-মা হারা করেছিস। তুই পালিয়ে বাঁচতে পারবি না, তোর বীভৎস মৃত্যু অনিবার্য। শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
তিনি আরও দাবি করেন, শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কারণে সেনাবাহিনীর একাংশকে কাজে লাগিয়েছেন, একাংশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়েছেন এবং আরেক অংশকে হত্যার শিকার করেছেন।
DGFI-র বিরুদ্ধে গুম-খুনের অভিযোগ
প্রথম পোস্টে সারজিস আলম স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে তার প্রত্যক্ষ নির্দেশে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (DGFI) অসংখ্য গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল। তিনি লেখেন, “এই সকল অপকর্মের পেছনে DGFI-এর যেসব সদস্য জড়িত, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। জালিমরা অন্যায় করে পার পেয়ে গেলে আরও জালিম হয়ে ওঠে, আর মজলুমদের ওপর জুলুম বাড়তে থাকে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরও যোগ করেন, এই সব ঘটনার শুধু ডকুমেন্টারি বা রেকর্ড সংরক্ষণ নয়, সরাসরি খুনিদের বিচারের ব্যবস্থা করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হতে হবে।
“বিডিআর হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত”
অন্য এক পোস্টে সারজিস আলম আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তার ভাষায়, “বিডিআর হত্যাকাণ্ড কোনো বিদ্রোহ ছিল না, বরং এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর সঙ্গে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, সেনাবাহিনীর একাংশ, বিডিআরের একাংশ এবং বিদেশি এজেন্সি জড়িত ছিল।”
তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রের ভেতর-বাহিরের বিভিন্ন পক্ষের যোগসাজশে এ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাঠামোকে দুর্বল করা।
বিচারের দাবি
সারজিস আলম জোর দিয়ে বলেন, দেশের ইতিহাসে সংঘটিত এসব নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা না গেলে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও আইনের শাসন কখনোই প্রতিষ্ঠিত হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই খুনিদের বিচার নিশ্চিত করা এখনই সময়। দেরি হলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।”