রাজবাড়ী: রাজবাড়ী সদর উপজেলায় সাহান সরদার নামে এক ব্যক্তির সুদের ফাঁদে পড়ে বেশ কয়েকটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এই অভিযোগে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তাকে গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের উদয়পুর এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন।
অভিযুক্ত সাহান সরদার বসন্তপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের মৃত তুতা সরদারের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘সাহান সরদার দীর্ঘদিন ধরে চক্রবৃদ্ধিভাবে সুদের ব্যবসা করছেন। সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে তিনি গ্রাহকদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন। তিনি দরিদ্র মানুষদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেন এবং বিভিন্ন কৌশলে তাদের কাছ থেকে সই করা একাধিক চেক সংগ্রহ করেন। এরপর অল্প টাকা দিয়ে বড় অঙ্কের সুদ আদায় করেন। কেউ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে, পূর্বে সংগৃহীত ফাঁকা চেকের পাতায় ইচ্ছেমতো অঙ্ক বসিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। প্রতারণার মাধ্যমে শতাধিক দরিদ্র পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছেন তিনি।’
বসন্তপুর ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের ভুক্তভোগী তাইজুদ্দীন বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ১৬ বছরের ছেলে মিরাজ বিশ্বাস। সে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। সাহান সরদার আমার ছেলেকে মাসে ১৪ হাজার টাকার একটি কাজ দিবে বলে নিয়ে যাই। আমার ছেলে ২ মাস কাজ করে সেখানে। একদিন আমার ছেলে বাড়িতে এসে ৭ লাখ টাকা চাই ব্যবসার জন্য। আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে কিস্তি তুলে, বাড়ির গরু বিক্রি করে এবং আমার মোটরসাইকেল বিক্রি করে ছেলেকে টাকা দেই। আমাকে না জানিয়ে আমার ছেলে সাহানকে টাকা দেই। সাহান আমার ছেলেকে দিয়ে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলায় এবং কৌশলে তার থেকে সই করা ফাঁকা চেক নিয়ে নেয়। সেখানে আমার ছেলে দুই মাস চাকরি করেছে সেটার টাকাও দেয়নি, ৭ লাখ টাকা ব্যবসার জন্য নিয়েছে সেটার টাকাও দেয়নি। আরও উলটো ১৬ লাখ টাকা আমাদের কাছে পাবে বলে দাবি করে আমার ছেলের নামে মামলা করেছে।’
বসন্তপুর ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের ভুক্তভোগী কাশেম শেখ বলেন, ‘আমি সাহান সরদারের থেকে সাত লাখ টাকা নেই। তখন আমার থেকে একটি ব্যাংকের ফাঁকা চেক নেয়। আমি তাকে লাভসহ ৯ লাখ টাকা দিয়ে পরিশোধ করি। কিন্তু সে আমাকে চেকের পাতা ফেরত দেয় না। এখন সে ২০ লাখ টাকার মামলা দেবে বলে হুমকি দিচ্ছে।’
আরেক ভুক্তভোগীর পিতা হাসেম শেখ বলেন, ‘আমার ট্রাকড্রাইভার ছেলে সাহান সরদার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়। টাকা নেওয়ার সময় চেক নিয়ে দিতে হয় সাহানকে। পরবর্তীতে এই টাকা পরিশোধ করে এবং এক লাখ টাকা অতিরিক্ত লাভ দেয় তাকে। কিন্তু তারপরও মাঝে মাঝে সাহান সরদার বাড়িতে এসে ঝামেলা করে। এক সময় আমার ছেলেকে কিছু মাস্তান দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। একইসঙ্গে আরও ১০ লাখ টাকার দাবি করে।’
আরেক ভুক্তভোগীর স্ত্রী বন্যা বলেন, ‘আমার স্বামী ব্যাংকের চেক জমা দিয়ে সাহান সরদারের থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছিল। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত অর্থ দিত আমার স্বামী। আমার স্বামী অসুস্থ হওয়ায় অতিরিক্ত টাকা দিতে পারে না। তখন সেই টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা বানিয়েছে। ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করার পরেও চেক ফেরত দেয় না। উলটো টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়াতে তিনি ৪ লাখ টাকার মামলা দিয়েছে। সাহানের অত্যাচারের কারণে আমার স্বামী স্ট্রোক করে ঘরে পড়ে আছে।’
আরেক ভুক্তভোগীর স্ত্রী সাথি বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী সাহানের থেকে ৩০ হাজার টাকা নেয়। টাকা নেওয়ার পর এক বছর ধরে অতিরিক্ত টাকা দিয়েছে। এরপর আমাদের পরিবারে চাপের সৃষ্টি করেন তিনি। আমার স্বামী তার অত্যাচারে পরিবার ছেড়ে ৭ মাস পালিয়ে ছিল। এরপর আমার উপর চড়াও হলে বাড়ির জায়গা বিক্রি করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছি। ওই সুদখোর সাহানের কারণে আমরা ভিটে মাটি ছাড়া। এখন আমরা গুচ্ছগ্রামে থাকি।’
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। কোনো নির্যাতিত পরিবার থানায় অভিযোগ দিলে সেটিও গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে সাহানের মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।