ঢাকা: বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ছাড়া কেউ ‘প্রকৌশলী’ পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। নবম গ্রেডে ন্যূনতম বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দিতে হবে। দশম গ্রেডে ন্যূনতম ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং উচ্চতর ডিগ্রিধারী বিএসসি গ্র্যাজুয়েটদের নিয়োগেরও সুযোগ রাখতে হবে– প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন সব দাবিতে যখন আন্দোলনে উত্তপ্ত দেশ, তখন প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে আসে একটি নাম। তিনি হলেন বিশ্বব্যাংকের ‘ম্যাজিক বয়’ খ্যাত প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন একাধারে প্রকৌশলী, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিদ, প্রযুক্তিবিদ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা। তারই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফসল আজকের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। এর মাধ্যমেই দেশে বিকশিত হয়েছে প্রকৌশল খাতের বিপুল কর্মসংস্থান। বিস্তৃত হয়েছে প্রকৌশলীদের পেশাদারিত্ব। কারণ, তিনি তার সেন্স অব সোশ্যাল মিশনের মাধ্যমেই আজ ও আগামীর প্রয়োজন বুঝতে পারতেন।
উদ্ভাবনী উদ্যোগ আর চৌকস নেতৃত্বের শক্তিতে জীবদ্দশায় কামরুল ইসলাম সিদ্দিক হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের রূপকার। গত ১ সেপ্টেম্বর ছিলে তার ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুর পর বছরের পর বছর গড়ালেও প্রতিবছরই কোনো না কোনো কর্মে তিনি হয়ে ওঠেন প্রাসঙ্গিক। ফলে আজও বিদগ্ধজনরা মনে করছেন, দেশের প্রকৌশল জগতের কিংবদন্তি কামরুল ইসলাম সিদ্দিককে। তার মতো প্রশাসনিক দূরদর্শিতার অভাবে আজ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স আর গ্রাজ্যুয়েট প্রকৌশলীদের দ্বন্দ্ব এতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের মতো দূরদর্শী ও স্মার্ট নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এমন অবস্থার উদ্ভবই হতো না বলেই মনে করেন শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন ড. জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল হাসান।
কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বললেন, ‘তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভালো মানুষ, সজ্জন ও পরিশ্রমী। দেশের প্রতি তার ছিল অগাধ টান। সাধারণ মানুষের কল্যাণে কীভাবে আমাদের পারিপার্শ্বিকতাকে উন্নত করা যায়, সেই চিন্তাতেই উনি জীবনটা কাটিয়েছেন। তিনি এলজিইডি’র স্থপতি। তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে দেশে-বিদেশে পরিচিত করেছেন। কিন্তু বর্তমানে তার নেতৃত্বগুণের অভাব বোধ করছি আমরা।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, “আজ যখন ‘প্রকৌশলী’ পদবি নিয়ে ছাত্র বা পেশাজীবীরা নিজেদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে দেখি তখন খুবই পীড়া দেয়। কেননা, কামরুল ইসলাম সিদ্দিক যে প্রকৌশলী গড়ে তুলেছিলেন তাদের মধ্যে একটা ‘সেন্স অব সোশ্যাল মিশন’ ছিল। প্রকৌশলীরা একটা সোশ্যাল মিশন নিয়ে কাজ করবেন- এমন মানসিকতার প্রয়োজন রয়েছে আজ। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এতগুলো মানুষের আত্মাহুতির মাধ্যমে রাজনীতির যে পটপরিবর্তন হলো; ফের গণতান্ত্রিক ও মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধারের যে সুযোগ তৈরি হলো, তার সদ্ব্যবহার করছি কি না তা ভেবে দেখতে হবে। সেই জায়গায় কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের লিগ্যাসি (উত্তরাধিকার); সোশ্যাল মিশনতাড়িত পেশাদার প্রকৌশল গ্রুপের অভাব অনুভব করছি।”

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, অর্থনীতিবিদ ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা
তিনি আরও বলেন, ‘কামরুল ইসলাম সিদ্দিক সফলভাবে সেন্স অব সোশ্যাল মিশন ও পেশাদারিত্বের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি জলবায়ু সহনশীল টেকসই প্রযুক্তি নিয়ে অগ্রসর চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি তার সেন্স অব সোশ্যাল মিশনের মাধ্যমেই আজ ও আগামীর প্রয়োজন বুঝতে পারতেন। এজন্য তিনি নিজেকে, নিজের টিমকে প্রস্তুত করতেন। তাই আজকের তরুণদের প্রতি আমি আহ্বান জানাব, পরিবর্তনের অন্যতম এই স্থপতির উত্তরাধিকার হিসেবে তারা যেন পেশাদারিত্ব ও সেন্স অব সোশ্যাল মিশনের ওপর নিজেদের মানসিকতা ও মনস্তত্বকে দৃঢ় করেন। আশাকরি, আমাদের পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সেই জায়গায় তৈরি করে সমাজে অবদান রাখার চেষ্টা করবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর সাবেক ভিপি ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ বলেন, ‘প্রকৌশল খাতের শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষায় তিনি ছিলেন এগিয়ে। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে। তার কাছে সবার আগে ছিল দেশ। তার সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা সবাই সমীহ করতেন। তার সামনে কিছুতেই দাঁড়াতে পারেনি বিদ্যুৎ খাতের মাফিয়ারা। তিনি বেঁচে থাকলে বা তার মতো দূরদর্শী প্রশাসক থাকলে আজকের প্রকৌশল পদ ও কোটার দ্বন্দ্বের মতো কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টিই হতো না। অথচ এখন বিষয়টি রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দিতে যাচ্ছে। কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের নীতি অনুসরণ করলে এই সংকটও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।’
দায়িত্ব পালনে পিডিবি-তে এমন একটি অস্থিরতা তৈরি হলে তা কতটা দৃঢ়তার সঙ্গে কামরুল ইসলাম সিদ্দিক মোকাবিলা করতেন সেই কথা স্মরণ করে তারিক বিন আজিজ বললেন, ‘পিডিবিতে তিনি দীর্ঘ সময় ছিলেন না। অতি অল্প সময়ে দেশের বিদ্যুৎ খাতে বড়ধরনের পরিবর্তন আনেন। পিডিবির অভ্যন্তরীণ সংস্কারও করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি হতো না। যে যেখানে ছিলেন সেখানেই থাকতেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি ছিল ট্রেড ইউনিয়নের দখলে। দায়িত্ব নিয়েই তিনি এ ধারা ভাঙেন। সরকার সমর্থিত সিবিএ নেতাদেরও তোয়াক্কা করেননি তিনি।’
তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি করেন। বদলি ও পদায়নে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টাও নেতাদের কোনো তদবিরই তিনি আমলে নেননি। কাজ না করলে নিয়োগ-বদলি স্বাভাবিক ঘটনা- এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি। এ ব্যাপারে সিবিএ’র আধিপত্য, রক্তচক্ষুকে মূল্য দেননি। তিনি যোগদানের আগে পিডিবির কর্মকর্তারা ভয়ে থাকতেন। ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা সব কিছু চালাতেন। কামরুল ইসলাম সিদ্দিক কর্মকর্তাদের অধিকার ফিরিয়ে এনে কাজের গতি সৃষ্টি করেন। তার মতো দক্ষ প্রশাসক তো এখন দেখি না। এমন উদ্যোমী, অনুভূতিপ্রবণ ও মানবিক প্রশাসক আমাদের নেই।’

ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ, সাবেক ভিপি, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা
তার নেতৃত্বগুণে কঠোরতার সমান্তরালে যৌক্তিক কোমলতার সংমিশ্রণের উদারহণ দিয়ে তিনি বলেন, “তিনি কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতেন। প্রত্যেকের কাছে তাদের বক্তব্য লিখিত আকারে চাইতেন। আন্দোলনরতদের কথা বলার সুযোগ দিতেন। তাদের গ্রহণযোগ্য বিষয় আমলে নিতেন। এর পর সেগুলো পর্যালোচনা করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিকমানের সঙ্গে মিলিয়ে সমাধান দিতেন। তিনি সবাইকে বোঝাতেন। তার যুক্তিতে সবাই কনভিন্সড হতো। তিনি সবাইকে ‘উইন-উইন’ একটি জায়গায় নিয়ে আসতেন। ফলে তিনি শুধু সিদ্ধান্তই দিতেন না। সেটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতেন।”
কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের প্রশাসনিক ধারা ছিল ‘গতিময়’ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘একসময় দেশের কাজের জন্য দেশীয় প্রকৌশলীর সংকট ছিল। সেজন্য তিনি বুয়েটের প্রকৌশলী হওয়ার পরও প্রচুর ডিপ্লোমাধারীদের প্রশিক্ষণ ও একাডেমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। আইইবি সভাপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে ডিপ্লোমাধারীদের তিনি কখনো-ই প্রকৌশলী বলতেন না। তিনি তাদের সহযোগী বলতেন। তাদের জন্য উচ্চশিক্ষার পথ খুল দিয়েছিলেন। তিনিই ডিপ্লোমাদের সবচেয়ে প্রোটেনশিয়ালি ব্যবহার করতে পেরেছিলেন। একটি বড় ওয়ার্কফোর্স গড়ে তুলেছিলেন। তার সময়ে সাবই তার রুলস অব বিজনেস মেনে চলতো। আর এই রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী তিনি সবাইকে তার প্রাপ্য সুযোগ ও সম্মান দিতেন। তার কর্ম প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আজকের পরিস্থিতিতে তিনি নিশ্চিতভাবে ৯ম ও ১০ গ্রেডের ক্ষেত্রেও রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী পদের বিপরীতে প্রতিটি ক্ষেত্রে যোগ্যতা অনুযায়ী উভয়ের সুযোগ রেখে কোটা তুলে দিতেন। আবার ক্যারিয়ার উন্নয়নের পথও রাখতেন উন্মুক্ত।’
কর্মজীবনে অগ্রজ কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের বিষয়ে বলতে গিয়ে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসেন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘স্যারের কারণেই দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে তেজীভাব এসেছে। তার কর্মপদ্ধতি ও এলজিইডিসহ প্রকৌশলী পেশাকে একটা সম্মানজনক ও জাতীয় পেশায় উন্নীত করেছে। যুগ যুগ ধরে তার দর্শনেই এলজিইডি বিকশিত হতে সক্ষম হবে। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। দ্রুত সময়ে দেশের সম্পদের অপচয় হ্রাস করে নির্ভুল কাজ করার চেষ্টা করতেন তিনি। পূর্ত, বিদ্যুৎ, সড়ক ও জনপদ, আইইবি প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি নিজের সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। কিন্তু তাকে আজও স্বাধীনতা পদকের মতো কোনো জাতীয় সম্মাননায় ভূষিত করতে না পারাটা জাতির জন্য দীনতা। অথচ আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি তবে সহজেই দেখতে পাই, নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের গ্রামীণ অর্থনীতি মডেল বাস্তবায়নে তার অবদান রয়েছে। তিনি যথাযথভাবে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে রাবার ড্যাম নির্মাণ করে সেচের সুবিধা বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। একই ভাবে গ্রাম ও শহরের মধ্যে সহজ যোগাযোগ পথ তৈরি করে গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্য সহজেই শহরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি অনুকূল অবকাঠামো তিনি উপহার দিয়ে দারিদ্র বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়নের মতো কাজে অংশীদারের ভূমিকা পালন করেছেন। তার দূরদর্শিতার ফলেই দেশে একটা ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সৃষ্টি হয়েছে।’

প্রকৌশলী শহীদুল হাসান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, এলজিইডি। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা
বাংলাদেশে ডায়াবেটিক সমিতির যুগ্ন-কোষাধ্যক্ষ ও পরিচালনা বোর্ডের এই সদস্য আরও বলেন, ‘বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন কমরুল ইসলাম সিদ্দিক। তিনি ছিলেন অনেক কিছুরই পথিকৃত। উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে রাবার ড্যাম ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি খরা মৌসুমে সেচ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। উন্নত সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা উপহার দিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সঠিক বিনিয়োগ ও বিপণনের সুযোগ করে দিয়ে গ্রামের মানুষের আর্থসামাজিক জীবন বদলে দেওয়ার জন্য অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন। মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য তাদের কর্মসংস্থানে রুরাল ট্রান্সপোর্ট ও মার্কেটিং এবং ওয়াটার সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট, জিআইএস সিস্টেম চালু ইত্যাদি নানা উদ্ভাবনী কাজ তিনি করেছেন। আবার দেশে প্রকৌশলীদের উচ্চশিক্ষাকে সবসময় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি পেশাদারি প্রকৌশলীদের বাস্তব দক্ষতা উন্নয়নের জন্য মেঘনা নদীর তীরে ইঞ্জিনিয়ার্স স্টাফ কলেজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। আইইএবি’র প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে বৈরী পরিস্থিতিতেও তিনি ডিপ্লোমা ও গ্র্যাজুয়েট প্রকৌশলীদের কল্যাণে সময়োপযোগী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছেন ন্যায্যতার ভিত্তিতে।’
বিদ্যমান সমস্যাটি ঐতিহাসিক উল্লেখ করে শহিদুল হাসান বললেন, ‘চাকরি বাজারে নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়া এবং চারদিকে বৈষম্যবিরোধী মনোভাবের কারণে আজ বিষয়টি এতটা জটিল রূপ ধারণ করেছে। আমি মনে করি, দ্রুততার সঙ্গেই ৯ম গ্রেডকে কোটামুক্ত করা দরকার এব ১০ম গ্রেড সকলের জন্যই উন্মুক্ত করা দরকার। বিধিবদ্ধ সংস্থার মাধ্যমে প্রকৌশলীদের চাকরিতে প্রবেশে পেশাদার সনদ বাধ্যতামূলক করা উচিত। পদায়নের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে কাজের দক্ষতাকে আমলে নিয়ে পদায়নের সুযোগটিও বলবৎ রাখার প্রয়োজন আছে।’
আলাপকালে এই তিন গুণীই জানালেন, কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ছিলেন স্বাপ্নিক মানুষ। তিনি জানতেন, স্বপ্নকে কীভাবে জয় করতে হয়। কীভাবে কাজ করতে হয় দেশের মানুষের জন্য, দেশের কল্যাণে অর্থনীতিকে বদলে দেওয়ার জন্য। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি বদলে যাওয়ার আধুনিক রূপকার তিনি। তার এই বিশালত্বকে স্বীকার করতেই হবে। আর স্বীকার করতে গিয়ে যেকোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত করা এখন সময়ের দাবি। এর বাইরে কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে।