পঞ্চগড়: আওয়ামী লীগ ও তাদের বি টিম জাতীয় পার্টিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পঞ্চগড় জেলা শহরের কুলি শ্রমিকসহ শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সারজিস বলেন, ‘এক চোর দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। যেই চোর এতোদিন তাদের ছায়াতলে ছিল সেই চোর এখন তাদের ব্যানারে তাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বলছে। চুরি বাটপারি ছাড়া আওয়ামী লীগের কেউ নেতা হয়নি। রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের যে গল্প জাতীয় পার্টির নেতা বলছে এই আইডিয়া ভারতের দেওয়া। এই আইডিয়া অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হবে না।’
তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশে যারা বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, শাপলা চত্বরে যারা আলেমদের হত্যা করেছে এবং চব্বিশে যারা হাজারো ছাত্র জনতাকে হত্যা করেছে সেই খুনিরা এই বাংলাদেশে কখনো রাজনীতি করতে পারে না। যেভাবে আওয়ামী লীগের সকল দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেভাবেই তাদের বড় দোসর জাতীয় পার্টিরও সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আওয়ামী লীগ ও তাদের বি টিম জাতীয় পার্টিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই আপনাদের ফ্যাসিস্টদের প্রতি নমনীয় আচরণ আপনাদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আস্থার সংকট তৈরি করছে। আপনাদের কাজ হলো খুনিদের বিচারের মঞ্চে নিয়ে যাওয়া।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘পঞ্চগড়ে ছাত্রদল স্কুলগুলোতে কমিটি দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের পায়তারা করছে। তারা স্কুলের শিক্ষার্থীদের রাজনীতির মধ্যে ঢুকিয়ে অপরাজনীতির চক্রে ঢুকাবে। সেখানে মাদকের ব্যবসা শুরু করবে, চাঁদাবাজি করবে।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলতে চাই বিবৃতি থেকে বের হয়ে আসেন। তারা শুধু বিবৃতি দেয়, কোনো একশন নেয় না। আপনার কাজ হচ্ছে একশন নেওয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা জাতীয় পার্টির মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছে তারা বাংলাদেশে নির্বাচন চায় না। তারা দেশে গৃহযুদ্ধ বাধাতে চায়। যারা এই পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত, তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায় এবং বাংলাদেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের মধ্যে ঠেলে দিতে চাচ্ছে।’
‘এখন বিএনপিকেও প্রমাণ করতে হবে তারা জাতীয় পার্টিকে চায় কি না। বিএনপি যখন গত ১৫ বছর নির্যাতনে ছিল তখন জাতীয় পার্টি কোথায় ছিল? তখন জাতীয় পার্টি খুন গুমসহ আওয়ামী লীগের সকল অপকর্মের বৈধতা দিয়েছে। যারা জাতীয় পার্টির ব্যানারে গত তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে প্রত্যেকে দুর্নীতিবাজ, প্রত্যেকে অবৈধ সম্পদ রয়েছে। এই সরকারের উচিত তাদের প্রতি নমনীয় না থেকে এই সম্পদ ক্রোক করা এবং তাদের বিচারের আওতায় আনা। তাদের তো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগই নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলা হলেও এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বাংলাদেশে নাই। পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। ঢাকায় ছাত্রলীগ যুবলীগের ক্যাডাররা প্রকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরকার ও তার গোয়েন্দা বাহিনী কী করছে? ঢাকা শহরের হাতিরপুল, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বড় ধরনের অপকর্ম করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেখানে অনেক ধরনের ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে।’
সারোয়ার তুষার আরও বলেন, ‘২৩৪ বিলিয়ন ডলার শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে পাচার করেছে। ওই টাকার গরমেই এখন নানা উৎপাত করতেছে। এই টাকা দেশের প্রতিটি গ্রামে ভাগ করে দিলে প্রতিটি গ্রাম ১০০ কোটি করে টাকা পেতো।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চান তাহলে ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়া আওয়ামী লীগকে গ্রেফতার করেন। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে আপনার শক্ত অবস্থান নিন। ভিপি নুরকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। তা না হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে না।’
এ সময় শ্রমিকদের সামনে রেখে অধিকার আদায়ে কাজ করার আহ্বান জানান তারা। অনুষ্ঠানে পঞ্চগড় জেলা এনসিপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।