ঢাকা: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, আমরা খুব সহজে আত্মতুষ্টির ফাঁদের মধ্যে ঢুকে যাই। আগেও ঢুকেছি। এখনো কিন্তু সেই আত্মতুষ্টির ফাঁদের মধ্যে ঢুকে যেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। বাংলাদেশ এগোচ্ছে-এই বয়ান আজ আমাদের ফেলে দিতে হবে। আজকের বাস্তবতায় এটা পর্যাপ্ত নয়। মূল বিষয় হলো এগোনোর গতি। এগোচ্ছে বলে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা গতিশীল বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় নগণ্য।
সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের করণীয় ও এফবিসিসিআই-এর ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, তার গতি খুব কম। আমাদের অর্থনীতির গতি নাই, ব্যবসা বাণিজ্যে গতি নেই। দারিদ্র্যের হার এখন উল্টোপথে, দেশের বেকারত্ব বেড়ে গেছে, সেটা এখন মহামারি আকারে পৌঁছে গেছে। এ ছাড়া প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার বেড়ে গেছে। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে এগুলো সাংঘর্ষিক, অসংগতিপূর্ণ। এই বাস্তবতায় অর্থনীতিতে গতি ছাড়া কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত, অর্থনীতিতে ও মানসিকতায় গতি আনতে হবে। ব্যবসা ও দৈনন্দিন জীবনে দুর্নীতির পাশাপাশি হয়রানিও বড় বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেমন লড়াই করতে হবে, তেমনি হয়রানির বিরুদ্ধেও একই শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশকে যোগ্যতার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম একই তালিকায় ছিল, আজ ভিয়েতনাম অনেক এগিয়ে গেছে।
ড. হোসেন জিল্লুর বলেন, এখন আমাদের প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি নিয়ে জোরালো আলোচনা শুরু করতে হবে। তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ থাকবে; সেই সঙ্গে ওষুধ, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, চামড়া ও অন্যান্য উদীয়মান খাতকেও নতুন প্রবৃদ্ধির চালক হিসেবে আবিষ্কার ও সহায়তা করতে হবে। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে গোষ্ঠীতন্ত্র ও অনৈতিকতার কারণে বেসরকারি খাত কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অর্থনীতির চাকা ঘোরাবে বেসরকারি খাতই। তাই তাদের আস্থায় আনতে হবে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ ও পরিবর্তিত ভূরাজনীতির মধ্যেও বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের কোম্পানিগুলো ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশল নিচ্ছে। তারা চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিতে চাইছে। রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ দেশগুলোতে বিকল্প খুঁজছে। মেক্সিকো, ভিয়েতনাম, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাশাপাশি বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য গন্তব্য হতে পারে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি, বন্দর ও অবকাঠামো উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ–কাঠামো সংস্কার ও নতুন রপ্তানি খাত গড়ে তোলায় জোর দিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি আগাম প্রস্তুতিমূলক ভূমিকা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, অন্যদিকে ডিজিটাল কূটনীতি ও জলবায়ু কূটনীতি আন্তর্জাতিক রাজনীতির বড় অংশ। কোন দেশ কীভাবে নেট জিরো প্রতিশ্রুতি পালন করবে, কীভাবে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে—এসব সিদ্ধান্তও বৈশ্বিক রাজনীতির কেন্দ্রে চলে এসেছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, বিগত এক বছরে দেশের অর্থনীতি একাধিক সমস্যার মুখে পড়েছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে সাড়ে ৬ কোটি শ্রমশক্তি থাকলেও মাত্র ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ আনুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছেন। বিদেশে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিকই অদক্ষ। ফলে তারা ভারতের বা শ্রীলঙ্কার শ্রমিকদের তুলনায় কম আয় করছেন। এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়সীমা ২০২৬ সাল থেকে অন্তত আরও তিন বছর পেছানো উচিত। যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া উত্তরণ হলে বাংলাদেশ অনেক বাণিজ্য সুবিধা হারাবে। একই সঙ্গে বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা প্রয়োজন।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত এক বছরে ব্যবসায়ীদের সমস্যার সমাধানে বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। ট্রেড সংগঠনগুলোকে আরও কার্যকর করতে হলে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।
 
                                     
                        