ঢাকা: ‘দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি বিডার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। অবশ্যই সকল বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় থাকার জরুরি। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি, সম্প্রতি বিদেশি সিগারেট কোম্পানিগুলো বিডাকে ব্যবহার করে দেশে সিগারেট বাজার বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) এক সাংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট।
তামাক বিরোধী এই জোট বলছে, ‘দেশের ৩৫টি মন্ত্রণালয় যখন স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, ঠিক তখন বিডার মাধ্যমে সিগারেট কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনকে বাধাগ্রস্ত করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। বিদেশি সিগারেট কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের রফতনি অঞ্চলে তামাকপাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের কারখানা খোলার পরিকল্পনা করছে। রফতনির জন্য সিগারেট কারাখানা স্থাপন করা হলে দেশে তামাক উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং খাদ্য সংকট দেখা দিবে।’
সংগঠনটি বলছে, ‘২০১৮ সালে তামাকের ওপর বিদ্যমান রফতানি শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে বিএটিসহ কতিপয় কোম্পানির প্ররোচনায় সেই রফতানিশুল্ক সম্পূর্ণভাবে মওকুফ করে দেওয়া হয়। ফলে তামাক চাষের জমির পরিমান ৯২ হাজার হেক্টর থেকে বেড়ে বর্তমানে ২০২৫ সালে ১ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তামাকের মতো ক্ষতিকর ফসল চাষে জমির ব্যবহার বৃদ্ধি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নতুন নতুন পণ্য রফতানির সুযোগ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড স্টেট অব ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২৪’ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্বাদু পানির মাছ আহরণে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। যা এ খাতের দৃশ্যমান অগ্রগতির ইঙ্গিত বহন করে। হিমায়িতকরণ এবং লবণজাতকরণের পাশাপাশি অন্যান্য আধুনিক মৎস সংরক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহার আরও বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে জাতীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মৎস শিল্পকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম প্রধান খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ আছে।’
‘এ ছাড়া, ভূপ্রকৃতি অনুকূলে থাকায় বাংলাদেশে প্রচুর কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। কাঁঠাল উৎপাদনে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। তবে উৎপাদনে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে থাকার পরও কাঁঠাল ও কাঁঠালজাত পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার না বাড়ায় এর রফতানি বৃদ্ধি পাচ্ছে না। (বিডা) ইপিজেডের মাধ্যমে আমাদের উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘নতুন কোনো তামাক কোম্পানিকে কারখানা স্থাপনের অনুমতি প্রদান সরকারের জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রচেষ্টার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। কিন্তু উদ্বেগের সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি যে, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নতুন তামাক কোম্পানি স্থাপনে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ ক অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির সকল পণ্য নিষিদ্ধের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে প্রদান করা হয়েছে।’
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫, এর ধারা ১২ অনুসারে তামাক ও তামাক জাতীয় ফসল চাষে নিরুৎসাহিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণের অধিকার রাখে। এ ছাড়াও, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ “ভয়েস অব ডিসকভারি” মামলায় দেশে যৌক্তিক সময়ে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে নির্দেশনা প্রদান করে। একই রায়ে দেশে নতুন তামাক কোম্পানিকে লাইসেন্স না দেওয়া এবং বিদ্যমান তামাক কোম্পানিগুলোকে এই ব্যবসা থেকে সরিয়ে অন্য ব্যবসায় স্থানান্তরিত করায় সহযোগিতার নির্দেশনা প্রদান করে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ পালন করা দেশের প্রতিটি সরকারি, বেসরকারী সংস্থার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
সংগঠনটি আরও বলছে, আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশের দেশীয় সিগারেট ও বিড়ি কোম্পানিগুলো এখন তামাক ব্যবসা থেকে সরে এসে কৃষি, শিল্পসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট মনে করে, দেশে নতুন সিগারেট কোম্পানির প্রসার বা স্থাপনের যেকোনো উদ্যোগ সংবিধানে উল্লেখিত নির্দেশনা এবং আপীল বিভাগের রায়ের পরিপন্থী।