ঢাকা: পুঁজিবাজারে শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ছয় ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে ৪৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেইসঙ্গে এক ব্যক্তিতে পুঁজিবাজারে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) কমিশেনের পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদের সেই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএসইসি’র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ’র সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) ৯৭২তম কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বস্ত্র খাতের কোম্পানি নিউ লাইন ক্লোথিং ও পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির ঘটনায় জরিমানা হয়েছে। এ ছাড়া, সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আবুল খায়ের হিরুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ও দুদকের কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করেপোরেশন অব বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নিউ লাইন ক্লোথিংয়ের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে রিয়াজ মাহমুদ সরকারকে এক কোটি ১৪ লাখ টাকা, আবুল বাসারকে চার কোটি দুই লাখ টাকা, সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিংকে ৪ কোটি ২৮ লাখ, মো. সেলিমকে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ও এমডি জামিলকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অর্থাৎ এই কোম্পানির শেয়ার কারসাজির ঘটনায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সবমিলে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কমিশন বলছে, গত ২৪ মে ২০২১ হতে ৫ জুলাই ২০২১ পর্যনন্ত নিউলাইন ক্লোথিংয়ের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া, কমিশন বিমা খাতের কোম্পানি পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে এনআরবি ব্যাংকের তৎকালীন সিইও মোহাম্মদ কামরুল হাসানকে ৭৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও পদগ্রহণ, চাকুরি ও সিকিউরিটিজ লেনদেনসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টক্ষেত্রে তাকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আর শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে শেখ ফারুক আহমেদকে ৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করারও সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশন মনে করে, ২৪ এপ্রিল ২০২১ হতে ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত কোম্পানিটি ঘিরে কারসাজির হয়েছিল।
একই সভায় কমিশন ফরচুন সুজের শেয়ার লেনদেনের কারসাজিতে সংশ্লিষ্টতা থাকায় ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) জড়িত কর্মচারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদনটি দুর্নীতি দমন কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া উক্ত শেয়ার লেনদেনের কারসাজিতে জড়িত থাকায় আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদনটি দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। একইসঙ্গে সরকারি কর্মচারী হিসেবে আবুল খায়েরের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বরাবর পত্র পাঠানোরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কর্তৃক এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ডের মেয়াদপূর্তিতে অবলুপ্তির জন্য গৃহীত সবপদক্ষেপ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে নিশ্চিত হয়েছে কমিশন। ফান্ডের অর্থ ইউনিটহোল্ডারদের পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ট্রাস্টিকে অবহিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।