ঢাকা: নতুন টেলিকম নীতিমালা ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের হুমকির মুখে ফেলেছে। এ নীতিমালায় বৈষম্যমূলক অনেক ধারা রয়েছে। এতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য না দিয়ে বিদেশী কোম্পানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এসব বৈষম্য দূর করতে হবে।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে ‘টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ’ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘নতুন টেলিকম পলিসি: দেশি উদ্যোক্তাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
টিআরএনবি’র সভাপতি সমীর কুমার দের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন ও সংগঠনটির সাবেক সভাপতি রাশেদ মেহেদী।
সভায় বিভিন্ন প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষে এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। আইএসপিবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, আইজিবি’র সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জুনায়েদ, আইওএফ সভাপতি আসিফ রাব্বানী, আইওএফ পরিচালন কর্মকর্তা মুশফিক মঞ্জুর, এআইওবি প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমান, এআইওবি) নির্বাহী সদস্য আহমেদ উর রহমান রোমেল প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
টিআরএনবি’র সাবেক সভাপতি রাশেদ মেহেদী বলেন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে নতুন টেলিকম পলিসি তৈরি হয়নি। এতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের ঝুঁকির সম্ভাবনা আছে। টেলিকম সেবা ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি দেশীয় টেলিকম খাতে চাকরির বাজারেও ফেলতে পারে নেতিবাচক প্রভাব।
অনুষ্ঠানে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)-এর পক্ষে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ মুহাম্মদ শরফুদ্দিন।
তিনি বলেন, নতুন টেলিকম নীতিমালা ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের হুমকির মুখে ফেলেছে। নীতমালায় আইএসপিদের মাইগ্রেশন প্রক্রিয়ায় স্পষ্টতা নেই। মাইগ্রেশন প্রক্রিয়ায় অস্পষ্টতা ও সীমিত ফ্লেক্সিবিলিটি রয়েছে। মাইগ্রেশন প্রক্রিয়ায় স্পষ্টতা আনতে হবে। ডিস্ট্রিক্ট এফটিএসপি-তে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ডিস্ট্রিক্ট এফটিএসপি’র কারণে সীমিত পরিষেবা গ্রাহকের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বৈষম্যের কারণ। বৈষম্যমূলক এ ধারা বাতিল করতে হবে। সকল অপারেটরদের মধ্যে সমান প্রতিযোগিতা তৈরি ও গ্রাহকের বৈষম্যমহীন সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইএসপিএবি- এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ মুহাম্মদ শরফুদ্দিন -ছবি : সারাবাংলা
ফুয়াদ মুহাম্মদ শরফুদ্দিন বলেন, জেলা, থানা ও উপজেলা আইএসপি’র ক্ষেত্রে নতুন নীতমালায় মাইগ্রেশন সীমিত করায় বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে৷ বৈষম্যমূলক এই ধারা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হবে।
আইএসপিএবি’র সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছে– অস্পষ্ট ধারাগুলো সংশোধন করে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করা; নির্দিষ্ট লাইসেন্স প্রকারের অন্যায্য সুবিধা প্রদানকারী নীতিগুলো বাতিল করে বড় বা ছোট সকল স্টেকহোল্ডারের জন্য সমান সুযোগের ব্যবস্থা করা; সকল ধরণের সেবাপ্রদানকারীর জন্য একই মানদণ্ড ও সুযোগ নিশ্চিত করা; পয়েন্ট টু পয়েন্ট যে কোন ওয়্যারলেস এবং এফটিটিএক্স প্লাস এক্সেস নেটওয়ার্ক প্রান্তিক পর্যায়ের সংযোগ হিসেবে গণ্য করা; আইএসপি তাদের সুবিধা অনুযায়ী (ন্যাশনওয়াইড/ ডিস্ট্রিক্ট) লাইসেন্স মাইগ্রেশন করা এবং পরবর্তীতে আপগ্রেড ও ডাউনগ্রেড করা; এনআইসিএসপি-এর কভারেজ থাকাকালীন এফটিএসপি প্রান্তিক পর্যায়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়তে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ক্ষমতায়ন করা।
আইওএফ পরিচালন কর্মকর্তা মুশফিক মঞ্জুর এক প্রবন্ধে বলেন, এই পলিসি প্রণয়নে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিয়ে বিটিআরসি লুকোচুরি করেছে। বিটিআরসি খামখেয়ালি বা পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে সকল নিয়মের ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ট্যারিফ ইস্যুতে এখনো বিটিআরসি-কে মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। এমন মুহূর্তে টেলিকম নীতিমালা আপডেট করতে তিনটি মূল লাইসেন্সের ওপর করা হয়েছে। এতে আইজিডব্লিউ, নিক্স, আইসিএক্স বাদ পড়ছে। এই নীতিমালা তৈরিতে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলে বড় লুকোচুরি ছিলো। এখানে টেলিকমের প্রভাব ছিলো। বিটিআরসি সেই প্যানেলের নাম শেয়ারে অস্বীকৃতি জানায়। প্রহসনমূলক কর্মশালা করে। আমাদের মতামতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। নীতিমালায় আইসিএসপিদের কানেক্টিভিটি ও আইপি ট্রানজিট, ভয়েস কল, এসএমএস রাউটিং করতে পারবে। এজন্য বিটিআরসির পূর্বানুমোদন নিতে হবে। বিপরীতে এনএসপিরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ সেবা দিতে পারবে। এটা সাংঘর্ষিক। সব কিছুর ভাগ্য নিয়ন্তা হয়ে উঠেছে বিটিআরসি। বাংলাদেশে ব্যবসারত মোবাইল অপারেটররা অন্যান্য লাইসেন্সির ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। ডিরেগুলেশনের নামে বিদেশী মোবাইল অপারেটরদের ক্ষমতায়িত করা হয়েছে।
আইওএফ সভাপতি আসিফ রাব্বানী বলেন, গোষ্ঠী স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এই পলিসি করা হয়েছে। এখানে দেশীয় উদ্যোক্তাদের কোনো স্থান নেই। বরং আগের মতোই ভিওআইপি’র মাধ্যমে গডফাদারদের রক্ষার মতো চেষ্টা চরছে।
এসোসিয়েশন অব আইসিএক্স অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এআইওবি) নির্বাহী সদস্য আহমেদ উর রহমান রোমেল বলেন, নীতিমালায় ছোট অপারেটদের আমলে নেয়া হয়নি। আসিএক্স না থাকলে প্রতিটি এএনএস এর আলাদা রুম লাগবে। ৯৯০টির বেশি দ্বিপাক্ষিক লিংকের প্রয়োজন হবে। আমরা অতিরিক্ত মুনাফাখোর নই। যে ৪ পয়সার কথা বলা হচ্ছে তা এমনি ওদের হাতে চলে যাবে।
এআইওবি প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিদ্যুতে বিভ্রাট হলেও দেশে টেলিকমে বড় ধরনের বিভ্রাট ঘটেনি। ৪ পয়সা আয়ের ২ পয়সাই আমরা সরকারকে দেই। আমরা মিডয়েটর নই। ফ্যাসিলেটরের বদলে বিটিআরসি-ই এখানে মিডয়েটর।
আইআইজিএবি’র পক্ষ থেকে মেজর (অব) মাহমুদ শাহেদ বলেন, আইআইজি মধ্যস্ত্বভোগী নয়। আইটিসি আইসিএসপি হওয়ায় তারা হয়ে ওঠবে মধ্যস্বত্বভোগী। তাই এই লাইসেন্সিকে আইসিসপি-তে রূপান্তরের সুযোগ রাখা দরকার।