Sunday 14 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রাইব্যুনালে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য
সিমবিহীন ফোনই দিয়েছিল শহিদ আনাসের পরিচয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:৫৮

জুলাই আন্দোলনে শহিদ শাহরিয়ার খান আনাস তার মায়ের সঙ্গে। ফাইল ছবি

ঢাকা: পরিচয়হীন তরুণের পকেটে মেলে সিমবিহীন বাটন বা ছোট্ট ফোন। সেভ করা হাতেগোনা কিছু নম্বরের ভিড়ে ‘মা’ নামের নম্বরে দেওয়া হয় কল। অচেনা কণ্ঠে ফোন পেয়েই হাসপাতালে ছুটে আসেন সেই গর্ভধারিনী। ছেলের নিথর দেহ দেখে মায়ের কান্না ছাপিয়ে ওঠে হাসপাতালের দেয়াল। জড়িয়ে ধরেন ‘নাড়িছেঁড়া ধনের’ মরদেহ। তার রক্তে ভিজে যায় পরনের কাপড়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এমন বর্ণনা দেন শহিদ শাহরিয়ার খান আনাসের সহযোদ্ধা মো. সৌরভ আহমেদ। রাজধানীর চানখারপুলে গত বছরের ৫ আগস্ট আনাসসহ ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৪ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তিনি। এ মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে সপ্তম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য ছিল আজ রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর)। এরই ধারাবাহিকতায় সৌরভের জবানবন্দি রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল।

বিজ্ঞাপন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌরভ বলেন, “২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমি সক্রিয়ভাবে অংশ নিই। এটা ছিল কোটাবিরোধী আন্দোলন। ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে মেস থেকে সকাল ৯টায় বের হয়ে চানখারপুল এলাকায় যাই। এর পর আমরা বহু সংখ্যক আন্দোলনকারী শহিদ মিনারের দিকে যাওয়ার জন্য রওনা দিই। কিন্তু বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে পৌঁছালে আমাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপসহ রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। এতে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন গলিতে আশ্রয় নিই। পুলিশের তীব্র গুলির মুখে আমিসহ আরও অনেকে ১ নম্বর নবাবকাটারা রোডে ঠাঁই নিই। পুলিশের গুলিতে অনেক আন্দোলনকারী আহত হন।’

তিনি বলেন, ‘দুপুর ১২টা বা ১টার দিকে আমার পাশে একজন আন্দোলনকারীর বুকের বাম পাশে গুলি লাগে। গুলিটি তার পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে আমি ও আরেকজন আন্দোলনকারী মিলে তাকে রিকশায় করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। পথে রিকশা থেকে নেমে যান অন্য আন্দোলনকারী। পরিচয় জানা না থাকার কারণে তাকে বেনামি টিকিট কেটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক পর্যায়ে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর আমি তার পরিচয় জানার চেষ্টা করি। ওই সময় তার পকেটে থাকা একটি সিমবিহীন বাটন ফোন পাই। সেই ফোনে কয়েকটি নামের সঙ্গে মা নামে একটি নম্বরও সেভ ছিল।’

“সেই নম্বরে কল দিলে একজন মহিলা রিসিভ করেন। আপনাদের কেউ আন্দোলনে গিয়েছে কিনা জানতে চাই। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আনাস আন্দোলনে গিয়েছে’। আমি তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে আসতে বলি। এর পর আনাসের মা-বাবা ও নানা হাসপাতালে আসেন। আনাসকে দেখে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আনাসকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকেন মা। এতে তার শরীরে রক্ত লেগে যায়। পরে আনাসের মৃত্যুর সনদ ও হাসপাতালে ভর্তির টিকিট তাদের বুঝিয়ে দিই আমি। তারা আনাসের মরদেহটি বাসায় নিয়ে যান।’

এই সাক্ষী বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে আনাসের বাবা-মাকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা বিস্তারিতভাবে জানাই। রিকশাযোগে আনাসকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় অনেকেই ভিডিও করেছিলেন। রাব্বী নামের একজনও ভিডিও করেছিলেন। রাব্বীর ওই ভিডিও সম্বলিত মোবাইলটি আমার সম্মুখে জব্দ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ ঘটনার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা; যাদের আদেশে গুলি করা হয়, তাদের বিচার দাবি করছি। যারা গুলি করেছে তাদেরও বিচার চাই।’

সৌরভ ছাড়াও এ মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আজ সাক্ষ্য দিয়েছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য অজয় কুমার ও আবদুর রহমান। সবমিলিয়ে ১৬ সাক্ষী নিজেদের জবানবন্দি দিয়েছেন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

সারাবাংলা/আরএম/পিটিএম

আনাস ট্রাইব্যুনাল প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য সিমবিহীন ফোন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর