Monday 22 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চসিক মেয়রের অভিযোগ
মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল বাসায় নিয়ে যান উপদেষ্টা, এরপর গায়েব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:৩০ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:৪২

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম ব্যুরো: স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ‘গুরুতর’ অভিযোগ এনেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রকাশ্য সভায় মেয়র বলেছেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা প্রকল্পের ফাইল দেখলে সেটা মন্ত্রণালয়ে থেকে বাসায় নিয়ে যান এবং এর পর সেটা আর ফেরত আসে না। এভাবে মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যায়।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর জামালখানে চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি (সিআইইউ) ক্যাম্পাসে ‘পরিচ্ছন্নতা সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।

বিজ্ঞাপন

বিশেষ সহকারীকে সামনে রেখে চসিক মেয়র বলেন, ‘আমাদের তিনটি প্রজেক্ট এখনও এলজিআরডি মিনিস্ট্রিতে আছে। অ্যাডভাইজার সাহেব যখন দেখেন যে, এটা একটা প্রজেক্ট, তখন উনি ফাইলটা আর মিনিস্ট্রিতে রাখেন না, উনি সেটা ঘরে নিয়ে চলে যান। দিজ ইজ দ্য প্যাটিথিক সিনারিও, দ্যাট উই আর ফেসিং নাও আ ডেইজ। ফাইল আছে, সব আছে, কিন্তু খুব চমৎকারভাবে উনারা বাসায় নিয়ে চলে যান, মিনিস্ট্রি থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমার গত ১১ মাসের অভিজ্ঞতার কথা বলছি। ফাইল আর মিনিস্ট্রিতে পাওয়া যায় না। আমি খুঁজতে খুঁজতে… মিনিস্ট্রিতে, কীরে আমার ফাইল কই, বলে- ফাইল তো বাসায় নিয়ে গেছে। এখন বাসায় নেওয়ার পরে সেটা আর সিগনেচার হয় না। ওটা আর আসে না।’

মন্ত্রণালয়ের ‘অসহযোগিতার’ কারণে কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির ইঙ্গিত দিয়ে মেয়র বলেন, ‘ইউকের প্রজেক্টটা আমি আর করতে পারিনি। জাপান অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ কোরিয়ার প্রজেক্টও। আজ এগুলো যদি আমি অনেক দ্রুত পেতাম, তাহলে চট্টগ্রাম শহর অনেক সুন্দর করে দিতে পারতাম।’

শাহাদাত বলেন, ‘এটা শুধু চট্টগ্রাম সিটির ব্যর্থতা নয়, এটা রাষ্ট্রের ও সরকারের ব্যর্থতা। চারশ কোটি টাকার আমার যে ইনসট্রুমেন্টের প্রজেক্ট, সেটা ফিন্যান্স মিনিস্ট্রিতে গিয়ে হয়ে গেল ২৯৮ কোটি টাকা। প্রায় একশ কোটি টাকা কেটে দিল। কেটে দিয়ে সেখানে বলে দিল, আমাদের ১৬০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে ৫ শতাংশ সুদে। আমরা একটা সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। শুধু ৬০ কোটি টাকা তারা আমাকে বরাদ্দ দেবে। বাকিটা সিটি করপোরেশনকে থেকে দিতে হবে।’

মেয়র আরও বলেন, ‘ওই ফাইলটা কিন্তু এখনো পর্যন্ত ওই জায়গায় রয়ে গেছে। আমি এখনো দৌড়াচ্ছি, প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। আমি কোথায় যাব? এর ওপর আর কেউ আছে? উনি চট্টগ্রামের মানুষ। উনাকে বলেছি, উনার পিএসকে বারবার বলেছি যে, কাজটা করে দেন। আমার মেশিনারিজ খুব দরকার। আমার আসলে মেশিনারিজ নেই।’

চসিক মেয়র বলেন, ‘যে যন্ত্রপাতিগুলো আছে সেগুলো ১৫-২০ বছরের পুরনো। গত সরকার একটা ড্রেনেজ সিস্টেম করতে গিয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার মত প্রায় খরচ করেছে। আর এটা যন্ত্রপাতি কেনার জন্য তিনশ কোটি টাকার খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি ফেইল করলাম। আমি ফেইল করলাম মানে রাষ্ট্র ফেইল করল। একদম স্ট্রেইট ফেইল করল। একটা সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানকে দিতে কার্পণ্য করল। আমি এটা দিতে পারছি না। এটা অমাদের ব্যর্থতা।’

চসিকের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বললাম যে, জলাবদ্ধতা একটা মেজর প্রবলেম, আমি এই প্রবলেম সলভ করতে চাই। এখানে যে অ্যাডভাইজারকে পাঠানো হলো, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আমি উনার সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি। কয়েকবার উনাকে অনুরোধ করেছি। তখন উনি বললেন যে, আগে জলাবদ্ধতার সমস্যাটা সমাধান হয়ে যাক, তারপর আপনি সেটা ভাবেন। আমার ৫০-৬০ শতাংশ জলাবদ্ধতার সমস্যা এরই মধ্যে সমাধান হয়েছে। এখনো আমি সেটা পাচ্ছি না। কাজেই কথা আমরা বলি, কিন্তু কথার পেছনে কথা আছে, এগুলো কিন্তু আমরা জানি না।’

মেয়রের বক্তব্যের পর বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা সব মিনিস্ট্রি, ফাইন্যান্স মিনিস্ট্রির সঙ্গে মারামারি করি। লিটারেলি মারামারি করছি। আমরা চাইলে বাজেটটা পাই না। যে বাজেটটা পাওয়া গেছে, যেহেতু মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ, আপনাকে যদি ৫ শতাংশ দিয়ে থাকে তাহলে আপনি প্লিজ এই ফান্ডটা নিবেন এবং চট্টগ্রামের মানুষকে বঞ্চিত না করে এই ফান্ডটা দিয়ে কাজ শুরু করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে উন্নয়নটা হয়েছে এ বছর জলাবদ্ধতা থেকে। চট্টগ্রামের মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই দিতে পেরেছি। আমরা এ বছর গলা পরিমাণ পানি দেখিনি। আমি জানি না, আপনারা দেখেছেন কিনা। সিটি করপোরেশন, সিডিএ, নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ যারা এ লক্ষ্যে কাজ করেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আপনাদের মোটিভেশনটা আছে। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যেটা শুরু হয়েছে, আশাকরি আগামী একবছরে সুফল দেখতে পাব।’

চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এম নুরুল আবসারের সভাপতিত্বে ও সহকারী রেজিস্ট্রার রুমা দাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল করিম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এবং দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক।

অনুষ্ঠানে নগর পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সিআইইউ বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ড. মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী খালেদ। অনুষ্ঠান শেষে শোভাযাত্রা বের হয়।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

উপদেষ্টা গায়েব চট্টগ্রাম ফাইল মেয়র সিটি

বিজ্ঞাপন

প্রদর্শিত হলো ‘জাগো হুয়া সাবেরা’
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:৩৮

সোনার দাম ফের ইতিহাসে সর্বোচ্চ
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর