Sunday 28 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইসলামী ব্যাংকে উত্তেজনা-বিশৃঙ্খলা, পটিয়ায় দিনভর লেনদেন বন্ধ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৫৭

ইসলামী ব্যাংকে দিনভর উত্তেজনা-বিশৃঙ্খলা। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কর্তৃপক্ষের ছাঁটাইয়ের ফাঁদ এড়াতে ‘বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন’ পরীক্ষা বর্জনের পর অফিস খোলার প্রথমদিনে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ব্যাপক উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পটিয়ায় দিনভর ব্যাংকটির কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

এদিকে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ব্যাংকের একদল কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, পরীক্ষা বর্জনের পর আজ কর্মস্থলে গিয়ে তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

উল্লেখ্য, দেশের বেসরকারি আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রণে নেয় এস আলম গ্রুপ, যেটি আগে রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে।

বিজ্ঞাপন

নতুন পর্ষদ আসার পর শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মকর্তার বিশেষ সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয় ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয়। কিন্তু পরীক্ষার জন্য মনোনীতদের অভিযোগ, ব্যাংকে ওই পদগুলোতে প্রায় আট হাজারের মতো কর্মকর্তা থাকলেও কেবল ২০১৭ সালের পরে নিয়োগপ্রাপ্তদের পরীক্ষা জন্য সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। এই পরীক্ষার আড়ালে ব্যাংকটিতে কর্মরত চট্টগ্রামের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনার অভিযোগ করেন তারা।

এ অবস্থায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে প্রায় শতভাগ বিশেষ সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা বর্জন করে। এর পর সপ্তাহের কর্মদিবস শুরুর প্রথমদিনে রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় ব্যাপক উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়। সকালে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার পৌরসদরে ইসলামী ব্যাংকের শাখা কার্যালয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়।

জানা গেছে, পরীক্ষা বর্জন করা কর্মকর্তারা কাজে যোগ দিতে গেলে বাধা দেন বর্তমান কর্তৃপক্ষের ‘আস্থাভাজন’ অন্যান্য কর্মকর্তারা। বাধা পেয়ে তারা বাইরে আসার পর স্থানীয় জনতা বিষয়টি শুনে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এতে এক পর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যাংকের গেইটে তালা ঝুলিয়ে লেনদেনসহ সবধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।

খবর পেয়ে পটিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দফায় দফায় লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এর পর ব্যাংকের ভেতরে-বাইরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে দিনভর ব্যাংকের কার্যক্রম আর সচল হয়নি। জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের পটিয়া শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাজ আজ (রোববার) বন্ধ ছিল।’ কারণ জানতে চাইলে তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর কয়েকবার কল করা হলেও তিনি আর সাড়া দেননি।

এদিকে বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসে ইসলামী ব্যাংকের হালিশহর শাখার কর্মকর্তা নুরজ্জামান রয়েল বলেন, ‘গতকাল ২৭ সেপ্টেম্বর কর্তৃপক্ষ অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট নামে একটি পরীক্ষা আয়োজন করে, যা হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী অবৈধ। কর্মকর্তারা একযোগে পরীক্ষা বর্জন করলে আজ সারাদিন ধরে আমাদের ভাই-বোনদের ওপর চরম নির্যাতন চালানো হয়। ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, উপস্থিতি দিতে বাধা দেওয়া হয় এবং কোনো সার্কুলার ছাড়াই গাদাগাদি করে আটকে রাখা হয়।’

রাঙামাটি জেলা শাখার কর্মকর্তা এমদাদ হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকের ভেতরের ও বাইরের সন্ত্রাসীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে এবং একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের বহিরাগতরা আমাদের মারধর করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ও হুমকি চালানো হচ্ছে। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর থেকে ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা একটি ‘চিহ্নিত গোষ্ঠী’র দখলে চলে গেছে। রাতের অন্ধকারে অনিয়ম করে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি গুদামের প্রহরীদেরও বিনা পরীক্ষায় অফিসার পদে উন্নীত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে চাক্তাই শাখার জুনিয়র অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল হক ও হালিশহর শাখার জুনিয়র অফিসার সেকান্দর হায়াত আরমান উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

ইসলামী ব্যাংক উত্তেজনা দিনভর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর