ঢাকা: অধিক সংখ্যক হিসাব জব্দে ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমতে পারে- এমন মন্তব্য করে বিষয়টি খুব সীমিত রাখার জন্য সরকারের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (পিআরআই) আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে মাসিক বিশ্লেষণ’ (এমএমআই) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন পরামর্শ দেন। পিআরআই নির্বাহী পরিচালক খুরশিদ আলম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার মুখ্য অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান।
ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ব্যাংক হিসাব জব্দ করা খুব বেশি ভালো কাজ নয়। কোনো একজন কুলাঙ্গারের সম্পদ থেকে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা যদি স্বাধীন থাকেন, তাহলে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কী কারণ আছে? কিন্তু এটা হচ্ছে এবং এটা ভালো ফল দেবে বলে মনে করি না। এতে ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমে যাবে। ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে হলে এ বিষয়ে খুব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আমি সরকারকে বলব, ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়টি খুব সীমিত রাখতে হবে। ওই যে ১০-১৫ জন কুলাঙ্গারের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
ব্যাংক খাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্তিশালী করতে হবে। অন্যদিকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একমাত্র কাজ হলো নীতি নির্ধারণ করা। কিন্তু বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে তারা কেবল ঋণ দিতে উৎসাহিত করে। এই ঋণ দেওয়া ও পরিচালকদের নীতি গ্রহণ কার্যক্রম আলাদা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রসঙ্গক্রমে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিককালে দেশে খুব বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের পথ অনুসন্ধান নিজেদের করতে হবে। বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত সঠিক পথে রয়েছে। তাই খুব সাহসের সঙ্গে নীতি গ্রহণ করতে হবে। কর আদায় বাড়াতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে পিআরআই’র মুখ্য অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান বলেন, আমরা কিছু ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ জন্ম দিয়েছি। ওই সব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তলানির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও দক্ষতা যদি আমরা রক্ষা না করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে আবারও নতুন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জন্মগ্রহণ করতে পারে।
এ বক্তব্যের জের ধরে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক শক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তির স্বার্থটা যখন এক হয়ে যায়, তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো অনেক কোম্পানি তৈরি হয়। ব্যাংক খাতের দুরাবস্থার কারণ এটাই। দেশে ইতিমধ্যে ১০-১৫টা ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আর শুধু সম্পদ জব্দ করাই যথেষ্ট নয়, এ সম্পদ উদ্ধার করে সরকারের খাতায় নিয়ে আসতে হবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) -এর ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী বলেন, অর্থ পাচার রোধ ও অর্থনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রকৃত অর্থে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আজকে যারা টাকা পাচার করছে, তারা আমাদের নাগরিক সমাজের অংশ। রাষ্ট্র কেন এটাকে বন্ধ করতে পারছে না, সেটি দৃঢ়ভাবে বলা দরকার।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, কোনো দেশে অর্থ পাচার বন্ধ থাকে না। তবে আমাদের ব্যর্থতা হলো এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারা। এখনো অর্থ পাচার হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সুশাসন থাকলে গভর্নরকে পালিয়ে যেতে হতো না। মৃতপ্রায় ব্যাংক একীভূত করলে ভালো হয়ে যাবে- এমন ধারণা সঠিক নয় বলে মনে করেন তিনি।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকলেও প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রত্যাশার অনেক নিচে। মূল্যস্ফীতি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে।