Monday 13 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিসর্জনের আবেগে শেষ হলো দুর্গোৎসব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট 
২ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:৪৯ | আপডেট: ৩ অক্টোবর ২০২৫ ০০:১৯

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে দেবীকে বিদায় জানানোর মুহূর্ত। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ষষ্ঠী থেকে দশমী—টানা পাঁচ দিন পূজা-অর্চনা, ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর ভক্তদের উচ্ছ্বাসে মুখর ছিল দেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপ। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব। ধর্মীয় আচার, আবেগ আর মিলনমেলার রঙিন আবহে ভরপুর এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটল চোখের জলে আর বিদায়ের গানে।

সকালে রাজধানীর বিভিন্ন মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয় বিহিত পূজা। ভক্তরা দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেন, ছিটিয়ে দেওয়া হয় শান্তির জল। এরপর দর্পণ বিসর্জন—যেন দেবীকে বিদায় জানানোর প্রতীকী রীতি। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী দুর্গা নবমীর পূজা শেষে মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যান, তাই দশমীতে তাকে বিদায় জানাতে হয় অশ্রুসিক্ত মনে।

বিজ্ঞাপন
কড়া নিরাপত্তায় দেবীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

কড়া নিরাপত্তায় দেবীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

বিকেলে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সৃষ্টি হয় এক অনন্য দৃশ্য। হাজারো মানুষ ভিড় করেন ওয়াইজ ঘাট এলাকায়। বিকেল ৩টায় পল্টন বদির স্কুলের পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নিরঞ্জন। ঢাকের তালে, শঙ্খের ধ্বনিতে আর ভক্তদের উল্লাসে নদীর ঢেউ যেন মিলেমিশে যায়। প্রতিটি প্রতিমা যখন জলে ভাসে, ভক্তদের চোখে তখন ঝরে পড়ে বিদায়ের অশ্রু।

দেবীকে বিসর্জনের পূর্বে ট্রাকে ভক্তদের উচ্ছ্বাস। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

দেবীকে বিসর্জনের পূর্বে ট্রাকে ভক্তদের উচ্ছ্বাস। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের নানা প্রান্তে একই আবেগ ছুঁয়ে যায় মানুষকে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে দুপুরের পর থেকেই ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে আসেন ভক্তরা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেখানে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। বিসর্জন দেখতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি ছিলেন অন্যান্য ধর্মের মানুষও। এ যেন এক বহুমাত্রিক মিলনমেলা—যেখানে ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ মিলে ভাগাভাগি করেন উৎসবের আনন্দ ও বেদনা।

দেবীকে বিসর্জনের পূর্বে ভক্তরা। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

দেবীকে বিসর্জনের পূর্ব মুহূর্ত। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং তা এক সামাজিক মিলনক্ষেত্র। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত মণ্ডপে মণ্ডপে যে প্রাণের উচ্ছ্বাস জেগেছিল, তা বিসর্জনের মুহূর্তে মিশে গেল এক অনাবিল বেদনায়। তবে ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী আবারও আসবেন আগামী বছর, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে শুভের জয়ধ্বনি তুলবেন।

দেবীকে নদীতে বিসর্জনের আগ মুহূর্ত। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

দেবীকে নদীতে বিসর্জনের আগ মুহূর্ত। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ সারাদেশেই একই আবেগে অনুষ্ঠিত হয় বিসর্জন অনুষ্ঠান। শিশুদের হাসি, নারীদের সিঁদুরে রাঙা মুখ, ভক্তদের প্রার্থনা—সব মিলিয়ে বিজয়া দশমী হয়ে ওঠে এক আবেগঘন বিদায়ের দিন।

দেবীকে বুড়িগঙ্গা নদীতে বিসর্জনের আগ মুহূর্ত। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

দেবীকে বুড়িগঙ্গা নদীতে বিসর্জনের আগ মুহূর্ত। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

ভক্তদের অনেকে বলেন, ‘দেবী মায়ের আগমনে আমরা যেমন আনন্দিত হই, তেমনি বিদায়ে মনটা কেমন খালি হয়ে যায়। তবে আবারো আসবেন—এই আশাতেই বুক ভরে ওঠে।’

ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দুর্গোৎসব ঘিরে সমাজে সৃষ্টি হয় মিলনমেলার পরিবেশ। বিজয়া দশমীর দিন তাই শুধু বিসর্জন নয়, ভক্তদের কাছে এটি এক পুনর্মিলনের প্রতীক, নতুন শক্তি ও আশার সঞ্চার।

চোখের জলে দেবীকে বিসর্জন। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

চোখের জলে দেবীকে বিসর্জন। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

বিসর্জনের এই আবেগঘন মুহূর্ত যেন মনে করিয়ে দেয়—বিদায় মানেই শেষ নয়, বরং নতুন শুরুর প্রতিশ্রুতি। দেবীর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে তাই ভক্তদের মুখে উচ্চারিত হলো আশা—‘আসছে বছর আবার হবে।’

সারাবাংলা/এফএন/এসএস
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর