ঢাকা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা মসজিদে নামাজে নেতৃত্ব দেন তাদের সমাজের সকল ভালো কাজেও নেতৃত্ব দিতে হবে। দেশের ওলামায়ে কেরাম যখন জাতির নেতৃত্ব দেবেন তখনই জাতি, দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্র কল্যাণের পথে এগিয়ে যাবে এবং একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ কায়েম হবে ইনশাআল্লাহ।
শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে বিশিষ্ট দাঈ ও ওয়ায়েজ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির ইসলামী দল ও শক্তির ঐক্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘ইসলামী দল ও শক্তিগুলোর ঐক্য দেশবাসীর কাম্য।’ এক্ষেত্রে ঐক্য বিনষ্ট এবং বিভেদ-বিভ্রান্তি তৈরি করে এমন যে কোনো বক্তব্য পরিহার করার জন্য তিনি উপস্থিত বিশিষ্ট ওয়ায়েজ ও দাঈগণের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা দাঈ-ইলাল্লাহ তাদের অবশ্যই বিনয়ী হতে হবে। আল্লাহ বিনয়ী লোকদের ভালোবাসেন। মানুষও বিনয়ী লোকদের ভালোবাসেন। কোনোভাবেই বাহাস বা আত্মঘাতী কোনো বিতর্কে লিপ্ত হওয়া যাবে না। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, আমরা সবাই দায়িত্বশীল। আল্লাহর দ্বীনের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের সকলের মধ্যে এ জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের জাতিকে জাগ্রত করার দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ জন্য আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানে সবাইকে পারদর্শী হতে হবে। আমাদের রাসূল (সা.) যেভাবে দায়িত্বপালন করে গিয়েছেন আমাদেরও তার দেখানো পথেই দায়িত্বপালন করতে হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর দেওয়া বিধান ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। কুরআনের এ বিধানকে সকলের সামনে তুলে ধরতে হবে। সকলের নিকট ইসলামের শাশ্বত বিধান তুলে ধরে দাওয়াত দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাসূলকে (সা.) পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে মাথা নত করা যাবে না।’ মাথা উঁচু করে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর জন্য তিনি উলামায়ে কেরামের প্রতি আহ্বান জানান।
দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমাদের সকলের কথা ও কাজে মিল থাকতে হবে। আমাদের কথা ও কাজে মিল না থাকলে আমাদের কথার কোনো আছর মানুষের মনে পড়বে না। কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে মানুষের নিকট ইসলামের সঠিক দাওয়াত পেশ করতে হবে। মানুষের সামনে বুদ্ধিবৃত্তিক, বিশ্লেষণধর্মী দাওয়াত পেশ করতে হবে এবং মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে।’ বিতর্কিত বক্তব্য পরিহার করে জিহাদ, ইসলামী শরিয়াহ ও দ্বীন সম্পর্কে সঠিক বক্তব্য মানুষের সামনে উপস্থাপন করার জন্য তিনি ওয়ায়েজীনদের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় উলামা বিভাগীয় কমিটির সভাপতি মাওলানা আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। এ ছাড়াও বক্তব্য দেন তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও জামেয়া-ই-কাসেমিয়া নরসিংদীর সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়েদ কামাল উদ্দিন জাফরী, গোপালগঞ্জ আলিয়া মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীনের সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় উলামা বিভাগীয় কমিটির সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আগত বিশিষ্ট ওয়ায়েজ ও দাঈরা অংশগ্রহণ করেন।