ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সেনাবাহিনীর ১৫ কর্মকর্তাকে সেনাসদরে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল কবির আহমেদ নিখোঁজ রয়েছেন। যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান এ তথ্য জানান।
সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা পাইনি। তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সকল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ৮ অক্টোবর সেনাবাহিনীতে চাকরিরত ১৫ জনকে আমরা সেনা হেফাজতে নিয়েছি। ১৬ কর্মকর্তা বর্তমানে সেনা সদরে সংযুক্ত আছেন। যা তারা ৯ অক্টোবর থেকে সংযুক্ত রয়েছেন।’
সেনা সদরের তথ্যমতে, ২৫ জনের মধ্যে ১৬ জনকে তারা হেফাজতে নিয়েছে। তবে সেনা সদরের আরেকটি সূত্র বলছে, ১৬ জনের মধ্যে একজন এখনো হেফাজতে আসেনি।
মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, ‘গত ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম দুইটা চার্জশিট জমা পরে। এরপর তৃতীয় আরেকটা চার্জশিট জমা পরে। এই সংবাদটি আসা শুরু করেছে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে। আমারা টিভি স্ক্রলের মাধ্যমে জানতে পেরেছি চার্জশিট জমা পরেছে এবং ট্রাইব্যুনাল এক্সেপটেড হয়েছে। চার্জশিটগুলোর মধ্যে একটা ছিলো গুম সংক্রান্ত যারা তখন ডিজিএফআই এ কর্মরত ছিল তাদের একটা বড় অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ। আরেকটা ছিল র্যাবের টিএফআই নিয়ে, আর আরেকটা ছিল ৪-৫ আগস্টের রামপুরার ঘটনা নিয়ে।
তিনি বলেন, ‘এরপর সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়ে গেল। গ্রেফতারি পরোয়ানার পর আইজিপির কাছে চলে যায়, নিয়ম অনুযায়ী এবং ২২ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো চার্জশিট কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানা পাইনি। চার্জশিটে প্রায় ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার নাম এসেছে। এর মধ্যে অবসরে আছেন ৯ জন কর্মকর্তা, এলপিআরে আছেন ১ জন কর্মকর্তা ও কর্মরত আছেন ১৫ জন। যারা অবসরে চলে গেছেন তাদের প্রতি আমাদের সেনা আইন ওইভাবে খাটে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সব আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ তারিখ কর্মরত ১৫ ও এলপিআরে থাকা ১ জন সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য একটা আদেশ সংযুক্তি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আদেশে তাদের বলা হয়েছে ৯ তারিখে তারা যেন ঢাকা সেনানিবাসে সেনা হেফাজতে চলে আসেন। আমরা কিন্তু এখনো গ্রেফতারি পরোয়ানা পাইনি বা পুলিশও আমাদেরকে কিছু জানায়নি। তারপরও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব কর্মকর্তাদের হেফাজতে আসার জন্য আদেশ দিয়ে দেয়।’
মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই ধরনের প্র্যাকটিস করে, সংবেদনশীল কেসে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, শুরুতে তাদের আমরা হেফাজতে নিয়ে থাকি। পরে প্রয়োজনমতো কোর্ট-মার্শাল বা অন্যান্য আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আমরা যাদেরকে হেফাজতে আসার জন্য বলেছি, তাদের অধিকাংশই সাড়া দিয়েছে; তবে এক জন সাড়া দেননি। ওই কর্মকর্তা ৯ তারিখ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া জানাননি। ১০ অক্টোবর আমরা তার সঙ্গে ও তার পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করি। জানতে পারি তিনি ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হয়ে ছিলেন, একজন আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বের হয়েছিলেন, কিন্তু পরে বাড়ি ফেরেননি এবং পরিবারের সঙ্গে তার মোবাইলফোনেও যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। তিনি মেজর জেনারেল কবির।’
তিনি বলেন, ‘এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিয়ম অনুযায়ী তাকে ‘ইলিগ্যাল এবসেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা করি। এ ছাড়া ১০ অক্টোবর আমরা এ বিষয়ে আরও কিছু আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। একইসঙ্গে ডিজিএফআই, এনএসআই ও বিজিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, স্থলবন্দর, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে তিনি অবৈধভাবে দেশের বাইরে যেতে না পারে- এর ব্যবস্থা করা হোক। আমরা তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা-তেও লোক পাঠিয়েছি। তিনি দেশের বাইরে চলে যেতে পারেন- এই আশঙ্কাকে মাথায় রেখে কাঠামোগতভাবে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। আমি নিজে ডিজি (ডিজিএফআই), ডিজি এনএসআই এবং ডিজি বিজিবির সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছি।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক ও বর্তমান ২৪ জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত ৮ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল এই নির্দেশ দেন। আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করে ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।