Sunday 12 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫ দফা দাবিতে খুলনায় জামায়াতের স্মারকলিপি পেশ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১২ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:১৮

খুলনায় জামায়াতের বিক্ষোভ।

খুলনা: পিআর পদ্ধতির নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে।

রোববার (১২ অক্টোবর) সকালে কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে নগরীর ডাকবাংলো চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে মিছিল সহকারে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জড়ো হয়। এখান থেকে নেতারা খুলনা জেলা প্রশাসকের দফতরে গিয়ে জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমানের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।

এ সময় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নিশ্চিতকরণ, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বাস্তবায়ন, জুলাই গণহত্যার বিচার এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার ও বিচারকালীন তাদের নিষিদ্ধের দাবিতে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি অভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

স্মারকলিপিতে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেরণা, জনমনের প্রত্যাশা ও পাঁচ দফা আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে দাবিগুলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আপনার নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, বাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। জাতির প্রত্যাশার আলোকে আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকার দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সাথে কতিপয় রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় সেগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।’

এতে আরও বলা হয়, ‘সরকার এরইমধ্যে জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত করেছেন। দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদে প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ তাদের পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। এ লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামী এরইমধ্যে সরকারের কাছে লিখিতভাবে দুইটি প্রস্তাব করেছে। প্রথমত, জুলাই জাতীয় সনদের জন্য “সংবিধান আদেশ জারি করা; দ্বিতীয়ত, এই সনদের অধিকতর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচনের পূর্বে গণভোট প্রদান করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা। সেটা না হলে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান ব্যতীত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে বলে আমরা মনে করি।’

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘এরইমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পিআয় পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সাথে একমত পোষণ করেছেন। বিগত সরকার বিভিন্ন স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে সংবিধান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণ করে লাংস করেছে। হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দের উপর জুলুম-নির্যাতন, মামলা-হামলা, জেল-জরিমানা, গুম, খুন করে দেশপ্রেমিক কণ্ঠকে স্তমিত করতে চেয়েছে। দিনের ভোট হাতে নির্বাচনের নামে জাতির সঙ্গে প্রহসন করেছে। আর এ সব অবৈধ কার্যক্রমগুলোকে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল শুধু প্রকাশ্যে সমর্থনই দেয় নাই বরং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাই স্বৈরচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে জনগণ জোর দাবি জানিয়ে আসছে।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা লক্ষ্য করছি জনগণের দাবিসমূহ কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসমূহ দাবি জানিয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহ সেপ্টেম্বর মাসে ৫-দফা গণদাবি জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে এবং রাজধানীসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলায় সমাবেশ, বিক্ষোভ ও গণসংযোগ করেছে। এ সমস্ত কর্মসূচীতে সারাদেশে বিপুল সংখ্যক জনগণ অংশগ্রহণ করেছে।’

স্মারকলিপি পরবর্তী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা কবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলামের পরিচালনায় বক্তব্য দেন ও উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও গাউসুল আযম হাদী, মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, মহানগরী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি রাকিব হাসান ও জেলা সেক্রেটারি ইলিয়াস হোসাইন, জেলা কর্ম পরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, আশরাফুল আলম, স ম এনামুল হক, হাফেজ আমিনুল ইসলাম, বটিয়াঘাটা উপজেলা আমীর মাওলানা শেখ মো. আবু ইউসুফ, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, ফুলতলা উপজেলা আমীর আব্দুল আলিম মোল্লা, কয়রা উপজেলা আমীর মাওলানা মিজানুর রহমান, রূপসা উপজেলা আমীর মাওলানা লাবিবুল ইসলাম, তেরখাদা উপজেলা আমীর মাওলানা হাফিজুর রহমান, খানজাহান আলী থানা আমীর সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো, দাকোপ উপজেলা আমীর মাওলানা আকতারুজ্জামান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সহ-সভাপতি আলী আকবার মোড়ল প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর