ঢাকা: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে সংগঠনের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমানের পক্ষে যুগ্ম-মহাসচিব আজিজুল ইসলাম ইসলামাবাদী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষায় সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পক্ষান্তরে অনেক বছর ধরে এ দেশের আলেম ওলামা ও সচেতন ধর্মপ্রাণ অভিভাবকরা প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়ে এলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। অথচ মুসিলম অধ্যুষিত বাংলাদেশে ধর্মপ্রাণ সচেতন অভিভাবকদের মতামত না নিয়ে মুসলমান ছেলে-মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষায় গানবাদ্য চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা ষড়যন্ত্রমূলক ও ইসলাম বিরোধী পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, দেশে একের পর এক কোরআন পোড়ানো ও অবমাননার ঘটনা ঘটছে। অথচ এ বিষয়ে সরকারের কোনো বিবৃতি বা বক্তব্য নেই। অন্য সব বিষয়ে তারা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখালেও এ ব্যাপারে উদাসীনতা ও অনুভূতিহীনতা দেখিয়ে আসছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
ইসলামাবাদী বলেন, শহিদ আবরার ফাহাদ হত্যা ও পিলখানা ট্রাজেডি স্মরণে নতুন দুটি জাতীয় দিবস করা হলেও ৫ মে গণহত্যার দিনকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করা হয়নি। সচেতনভাবে এটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনটি দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, অবিলম্বে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা জারি করতে হবে। কুরআন অবমাননার দুষ্টান্তমুলক বিচার করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ৫ মে তারিখকে শাপলা গণহত্যা দিবস ঘোষণা করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের যুগ্ম-মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন। হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দলীয় কর্মসূচির সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত না। নির্বাচনে কোনো নিজস্ব তৎপরতা, কোনো জোট করার বিষয়টি হেফাজতের মৌলিক নীতিমালার পরিপন্থি। আমিরে হেফাজত আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবু নগরী দেশের একজন শীর্ষ আলেম। বিভিন্ন ইসলামিক বিষয়ে ওনার পক্ষ থেকে মতামত এবং বক্তব্য আসে। (জামায়াত সম্পর্কে) তিনি যা বলেছেন, সেটা তার সর্বোচ্চ অভিভাকত্বের জায়গা থেকে ওনার মতামত। এ বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের কোনো সাংগঠনিক বক্তব্য থাকলে সাংগঠনিকভাবে বক্তব্য দেবে।
মাজারে হামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় ও দায়িত্বশীল সংগঠন। মাজারকে কেন্দ্র করে শরীয়াবিরোধী, দেশ বিরোধী অনৈসলামিক সামাজিকতাবিরোধী অনেক কার্যকলাম হয় বলে আমরা জানি। অনেক মাজারে মাদকসহ বিভিন্ন কাজের প্রচলন আছে। আমরা বলছি এ বিষয়ে প্রশাসন যেন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। মাজারে যেন দেশের শান্তিশৃঙ্খলাবিরোধী, ধর্মবিরোধী, আইনবিরোধী অসামাজিক কোনো কার্যকলাপ চলতে না পারে। হেফাজতে ইসলাম নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে মাজারে হামলা করা সমর্থন করে না।
মসজিদে রাজনৈতিক আলোচনা করতে না পারলে কোরআন তেলাওয়াত করতে দেওয়া হবে না এমন একটি বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মামুনুল হক বলেন, এ জাতীয় বক্তব্য যখন কোনো দায়িত্বশীল পক্ষ থেকে আসবে তখন হেফাজতে ইসলাম তাদের দায়িত্বশীল বক্তব্য দেবে। কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির একক কোনো বক্তব্য নিয়ে হেফাজতে ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবু নগরী, মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান, নায়েবে আমির মাওলানা মুফতি জসিম উদ্দিন, নায়েবে আমির মাহফুজুল হক, মাওলানা আবদুল আউয়াল, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আয়ুবী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, সহকারি মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজি, মুফতি বসির উল্লাহ প্রমুখ।