ঢাকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘জুলাই সনদ’ কেবল রাজনৈতিক নেতাদের সইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছেও পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘নাগরিকেরা যেন জানতে পারেন—রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী বিষয়ে একমত হয়েছে, কী দিকনির্দেশনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং অগ্রগতি কতদূর—সেটি নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত ‘অতি জরুরি বৈঠকে’ সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আলী রীয়াজ জানান, জাতীয় সনদের সই অনুষ্ঠান সফল করতে কমিশনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। তিনি রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, তা অভূতপূর্ব। অধিকাংশ দলের কাছ থেকে অতিথিদের তালিকা আমরা পেয়েছি। বৃহস্পতিবার থেকেই আমন্ত্রণপত্র পাঠানো শুরু হবে।’
তিনি আরও জানান, জাতীয় সনদ প্রায় ৪০ পৃষ্ঠার হলেও সইয়ের জন্য শুধুমাত্র অঙ্গীকারনামার পৃষ্ঠাটি ব্যবহৃত হবে। সইয়ের পর মূল দলিলটি সংরক্ষিত থাকবে।
আলী রীয়াজ অভিযোগ করে বলেন, ‘গত দুদিনে কিছু ভ্রান্ত তথ্য প্রচারিত হয়েছে।’ তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় জাতীয় সনদের সই অনুষ্ঠান সফল হবে বলেই আমরা আশাবাদী।’
তিনি বলেন, ‘‘প্রায় এক বছর ধরে চলা আলোচনার ফল হিসেবে ৮৪টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে। কিছু বিষয়ে ভিন্নমত বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকলেও, তা সনদেই উল্লেখ থাকবে, যাতে জনসাধারণ বুঝতে পারেন কোথায় ঐক্য হয়েছে, আর কোথায় হয়নি।’’
আলী রীয়াজ এই প্রক্রিয়াকে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘এই ধরনের ঐক্য শুধু দেশের রাজনীতিতে নয়, সাংস্কৃতিক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবেই, কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের শক্তিকে আমরা একত্রে ধরে রাখব—এই বিশ্বাসেই আমরা এগিয়ে চলেছি।’
তিনি শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই ঐকমত্যের ধারা আপনারা সবাই আগলে রাখবেন। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো, এই ঐক্যকে টিকিয়ে রাখা।’