ময়মনসিংহ: ভালুকার বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু দলের নাম ভাঙিয়ে এমপি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন— এটা পুরাতন অভিযোগ। তবে এবার তার বিরুদ্ধে উঠেছে নতুন অভিযোগ— চাঁদাবাজির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করিয়েছেন। এমনকি মামলায় তার পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী আজিজুল হক খান নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে খালাস দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। মামলাটির বাদী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ প্রিন্স।
আজিজুল হক খান তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে মামলা হইতে খালাস। ৫ই আগস্ট ২০২৪ এর পর ভালুকা বাটারফ্লাই চাঁদাবাজি অভিযোগ এনে ভালুকা থানা একটি মোকদ্দমা দায়ের করা হয়েছিল যার প্রেক্ষিতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। মোকদ্দমার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় তদন্তকারি কর্মকর্তা চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করলে আজ বিজ্ঞ আমলি আদালত চুড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহন করে ফখরুদ্দিন আহাম্মদ বাচ্চুকে খালাস দেন।’ এমনকি তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময়ও ফখরুদ্দিন আহাম্মদ বাচ্চুর খালাসের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অভিযোগপত্র থেকে ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর নাম বাদ পড়া প্রসঙ্গে ভালুকা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে তারা। ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর নাম কীভাবে বাদ পড়েছে- এটা আমি বলতে পারব না।’
এ প্রসঙ্গে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি (দক্ষিণ) মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে অনেকে অনেক কিছু বলতে পারেন। কিন্তু সব সত্য নয়। তদন্ত সাপেক্ষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। ইচ্ছা করলে বাদীপক্ষ নারাজি দিতে পারেন।’
আলোচিত এ ঘটনায় কীভাবে একজন চিহ্নিত অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ডিবি পুলিশের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন থেকে বাদ দেওয়া হলো- সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল। এদিকে এ ঘটনার পর ফখরুদ্দিন বাচ্চু বেপরোয়া হয়ে স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় নেতা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী মহলকে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে গতবছরের ১ সেপ্টেম্বর ভালুকার ব্র্যাক এনজিওর নার্সারির জমি দখল ও বিভিন্ন মিল-ফ্যাক্টরিতে চাঁদাবাজির অভিযোগে প্রাথমিক সদস্যপদসহ বিএনপি নেতা ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ প্রিন্স বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় মামলা করেন।
তবে বহিষ্কৃত ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিজের দলবল নিয়ে দলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা আরও জানিয়েছেন, ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু তৃণমূল কর্মীদের মাঝে ছড়িয়েছেন যে, তিনি স্থায়ী কমিটির কয়েকজনকে ম্যানেজ করেছেন এবং মনোনয়ন পাবেন। সম্প্রতি ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর পক্ষের কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলেরা ভালুকা থানার সামনে বিক্ষোভ করে।
তবে এর মাঝে নতুন অভিযোগ উঠেছে। বড় অংকের টাকার বিনিময় ও যোগসাজশে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে নাম কাটিয়েছেন বাচ্চু। গোপন সূত্র জানা গেছে, নেত্রকোণা ডিবিতে কর্মরত তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে কোটির টাকার মধ্যস্থতায় মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে নাম কাটিয়েছেন তিনি। এ ঘটনার পর পরই বহিষ্কৃত এই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তার সমর্থক ক্যাডাররা এলাকায় ছড়িয়েছে ‘মামলা শেষ করেছি ৫ কোটিতে, মনোনয়ন-বহিষ্কার প্রত্যাহার করাব ৫০ কোটিতে। তারপর ১৫ দিনে ভালুকা থেকে এ টাকা তুলে ফেলব’- এমন বক্তব্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির তৃণমূল এক নেতা বলেন, ‘দলে যদি পুনরায় বহিষ্কৃত কর্মীকে মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে সারা দেশে বিএনপির চেইন অব কমান্ড সম্পর্কে জনগণের মধ্যে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অনিয়মের পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।’
সম্প্রতি ভালুকা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক (সিগনেটরি) সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে দল থেকে তার উচ্ছৃখল কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, জমি দখল, সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপসহ নানা কারণে প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সে গায়ের জোরে সবকিছু করে। আইন কানুনের তোয়াক্কা কখনো করেনি। সাধারণ মানুষের কাছে তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। সবাই তাকে ভয় পায়। বিশেষ করে তৃণমূল বিগত কর্মকাণ্ডে মন থেকে মুছে ফেলছে।’
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘অলরেডি বাচ্চুর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার পরও কীভাবে প্রচার-প্রচারণা চালায় তা আমার জানা নেই। একটা মুরগি একবারই জবাই হয়। দল থেকে কোনো গ্রিন সিগন্যাল, রেড সিগন্যাল বা হোয়াইট সিগন্যাল দেয়া হয়নি। সারা দেশেই যারা দলীয় কর্মকাণ্ডবিরোধী কাজ করছে তাদের দল থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
উল্লেখ্য, শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।