চট্টগ্রাম ব্যুরো: কোনো রাজনৈতিক দলের নামের সঙ্গে ‘ইসলাম’ শব্দ থাকলেই তারা ইসলামের মালিক হয়ে যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় ‘আল জামিয়াতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া জিরি মাদরাসা’ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পাশাপাশি তিনি ওই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শাহ মোহাম্মদ তৈয়বের কবর জেয়ারত করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন।
রাজনৈতিক কারণে ধর্মের ব্যবহার বন্ধের তাগিদ দিয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘কোনো রাজনৈতিক দলের নামের সঙ্গে ‘ইসলাম’ শব্দ থাকলেই তারা ইসলামের মালিক হয়ে যায় না। রাজনৈতিক কারণে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কেউ যেন ক্ষমতার জন্য বা দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার না করে। কেউ কেউ বলে- অমুক দল পরাজিত হলে ইসলাম পরাজিত হবে, নাউজুবিল্লাহ ! এটি ভ্রান্ত ধারণা। কোনো দলের নামের সঙ্গে ‘ইসলাম’ শব্দ থাকা মানে সেই দলই ইসলাম নয় ‘’
‘আমরা আলেম-ওলামাদের সঙ্গে দেখা করছি, এটা ইসলাম বা ভোটের রাজনীতি নয়। বরং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে, যেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একসঙ্গে বসে নীতি ও আইন নির্ধারণ করবে। এতে আইন সবার জন্য প্রযোজ্য হবে, বাস্তবায়নও সহজ হবে।’
বিএনপি ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি বলে বিএনপি ইসলামবিদ্বেষী, সেটা নিঃসন্দেহে অপপ্রচার। আমাদের দল ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করা হয় এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সুতরাং বিএনপি ইসলামবিদ্বেষী—এই অভিযোগ নিছক রাজনৈতিক অপপ্রচার।‘’
‘ইসলামবিদ্বেষী যে শক্তি, আওয়ামী লীগ, সেটার পতন ঘটেছে। আমরা বহু আগেই বলেছিলাম, ইসলামবিদ্বেষী ও আলেমবিদ্বেষী আওয়ামী লীগ কখনো শান্তি আনতে পারবে না, ক্ষমতাও ধরে রাখতে পারবে না। শাপলা চত্বরে অসংখ্য আলেম-ওলামা শাহাদাত বরণ করেছেন। তাদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র আমাদের রক্ষা করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন গণতন্ত্রের জন্য আর জীবন না দেয়, সে জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনৈতিক কারণে যেন কেউ সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
বিএনপির অন্যতম নীতিনির্ধারক এ নেতা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা ৯০ থেকে ৯২ ভাগ মুসলমান, বাকিরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে—সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করা। সম্প্রীতির এই বন্ধন অটুট রাখতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমরা জাতির মধ্যে কোনো বিভাজন চাই না—ধর্মের নামে, ভাষার নামে বা জাতিগত কারণে নয়। আমাদের লক্ষ্য একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা কায়েম করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়া।’
এ সময় সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ন মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, পটিয়ার বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য গাজী মো. শাহজাহান জুয়েল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া, সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, দক্ষিণ জেলার সদস্য সচিব হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, রেজাউল করিম নেছার, সাইফুদ্দীন সালাম মিঠু ও সদস্য এনামুল হক এনাম।
এরপর সালাহউদ্দিন আহমেদ বিএনপি নেতাদের নিয়ে পটিয়ায় দেশের বৃহত্তর কওমী মাদরাসা ‘আল জামিয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া কাসেমুল উলুম মাদরাসা’ পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মাদরাসার মুহতামিম আবু তাহের নদভী এতে সভাপতিত্ব করেন।