ঢাকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত একটি দলিল নয়, এটি নাগরিক, রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের মধ্যে এক সামাজিক চুক্তি। এটি বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রাম, কষ্ট, ত্যাগ ও প্রচেষ্টার ফসল এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ঐক্যের প্রথম পদক্ষেপ।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ সই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূসসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আদর্শে রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল, তা নানা বাধা সত্ত্বেও থেমে যায়নি। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং সর্বোপরি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সেই ধারাবাহিক সংগ্রামেরই অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেই ধারাবাহিক সাহস, চেষ্টা ও প্রেরণার উত্তরাধিকার হিসেবেই আজ আমরা এই জুলাই জাতীয় সনদ সই করছি। রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় এক বছর ধরে আলোচনার মধ্য দিয়ে এই সনদে উপনীত হয়েছে। তাদের আন্তরিকতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সমাজের বিভিন্ন অংশ, গবেষক, কমিশনের কর্মচারী এবং গণমাধ্যমও এই প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ।’
আলী রীয়াজ বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের অবদানে এই সনদ গঠিত হয়েছে। এটি রাষ্ট্র সংস্কারের দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন এবং ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে নাগরিকদের দৃঢ়তা ও সাহসিকতার প্রতীক।’
তিনি মনে করেন, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রচেষ্টা একদিনে সফল হবে না, তবে এই সনদ সেই অভিযাত্রার সূচনা। ‘আমাদের বহু স্রোত, কিন্তু মোহনা একটাই—একটি স্বাধীন, ন্যায়ের ভিত্তিতে গঠিত, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াব,’—বলেন আলী রীয়াজ।
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আজকের জাতীয় সনদ সই বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন দিকনির্দেশক মুহূর্ত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী যাত্রার ধারাবাহিকতায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।’