ঢাকা: যোগ্য, দল নিরপেক্ষ ও প্রজ্ঞাবান লোকদের দিয়ে প্রশাসন পুনর্গঠন এবং সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা ছাড়া জনগণ দায়সারা গোছের তামাশার কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না বলে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদীয় দলের নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর মহাখালির কলেরা হাসপাতালের সামনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজনসহ ৫ দফা দাবি আদায়ের দাবিতে গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিছেন। কিন্তু পাকিস্তান আমলের ২৪ এবং স্বাধানতার পর ৫৪ বছরসহ মোট ৭৮ বছরে কোনো সরকার দেশে কুরআনের বিধান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেনি। অথচ পাকিস্তানে স্বপ্লদ্রষ্টা কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হাতে কুরআন নিয়ে কুরআনকে পাকিস্তানের সংবিধান বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা কাজে পরিণত করেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর যারাই ক্ষমতায় এসেছেন তারাও সংসদের কুরআনের আইন পাশ করেনি। কিন্তু ইতোমধ্যেই আল্লাহর আইনের পক্ষে দেশে জনমত সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিকট অতীতে সেখানে দাঁড়ি, টুপি ও ইসলামী লেবাসধারীদের অপদস্ত করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ইসলামী আদর্শের ছাত্ররাই বিজয়ী হয়েছে।’
তিনি ছাত্রদের এ ঐতিহাসিক বিজয়কে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত টেনে নিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বিগত প্রায় ১৬ বছরে ধরে পতিত ফ্যাসিবাদী দেশে অপশাসন-দুঃশাসন ও জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি বরং ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা ছেড়ে বিদেশে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু পতিতদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই বরং তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে অগ্নি সন্ত্রাসসহ নানাবিধ অপতৎরতা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে জনগণ সচেতন রয়েছে। তারা পতিতদের কোনো ষড়যন্ত্রই দেশে বাস্তবায়িত হতে দেবে না। স্বৈরাচারি ও ফ্যাসিবাদীদের জুলুম-নির্যাতন ও ভীতিকর পরিবেশ কোনোভাবেই দৃশ্যপটে ফিরে আসতে দেওয়া হবে না।’ তিনি পতিতদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সকলকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
মুজিবুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। অতীতের আওয়ামী পদ্ধতির নির্বাচন জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না। ২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালের নৈশকালীন ভোট এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি জনগণ দেখতে চায় না। তাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সবার আগে প্রশাসনের দলবাজী বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনের আগেই জুলাই গণহত্যার বিচার, স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তির জন্য নভেম্বরের মধ্যই গণভোটসহ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের সকল নাগরিকের ভোটের মূল্যায়ন করতে হবে। প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।’
তিনি আগামী সংসদকে কুরআন সংসদে পরিণত করার জন্য দাঁড়িপাল্লার প্রতীকের গণজোয়ার সৃষ্টি করে সকলকে ময়দানে আপসহীন ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন, মুহিবুল্লাহ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন প্রমুখ।