ঢাকা: পোস্টাল ভোটিংয়ের বিধান চালু, একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোট, জামানত ৫০ হাজার টাকা, অনিয়মে পুরো আসনের ভোট বাতিলের বিধানসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে সংশোধিত অধ্যাদেশে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিও-এর ক্ষেত্রে ইম্পর্টেন্ট অ্যামেন্ডমেন্ট করা হয়েছে। ইভিএমসংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতায় পলাতক ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণারা বিধান যুক্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পলাতক ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না- এটা যুক্ত করা হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিসের দায়িত্বশীলকে তথা জেলা নির্বাচন অফিসারকে যুক্ত করা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘পলাতক হচ্ছে-আদালত যখন পলাতক ঘোষণা করে (তাদের অযোগ্য করা হয়েছে)। যেদিন আদালত আপনাকে আসতে বলছে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, আসছেন না; তার পর পলাতক ঘোষণা করে। বিচার চলাকালীন পলাতক হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রার্থীদের হলফনামায় এফিডেবিটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি আয়ের উৎসের বিবরণ দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এসব কিছু প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয়ের উৎস, সম্পত্তি, বিবরণ নির্বাচন কমিশনে দিতে হবে। এটা আমরা ওয়েবসাইটে পাবলিশ করে দেব, সবাই জানবে- কার কী সম্পত্তি।’

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ছবি: সংগৃহীত
এবার ভোটে প্রার্থীদের জামানত বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা এবং (একক প্রার্তীর আসনে) ‘না’ ভোটের বিধান করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। ২০১৪ সালের প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। একজন প্রার্থী থাকলে সেখানে ‘না’ ভোট হবে। ২০১৪ সালের মতো ভুয়া সাজানো নির্বাচন যেন না হয়, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে সংশোধিত আরপিও তে। ভোটের সময় অনেকে জোটভুক্ত হলে জনপ্রিয় বা বড় দলের মার্কায় ভোট করা যেত। এখন আর সে সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনি জোট হলে, জোটের অংশ হলেও দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। যাতে ভোটারা ক্লিয়ার আইডিয়া পায় উনি কোন দলের।’
তিনি জানান, নির্বাচনি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ব্যালেট ভোটের বিধানটি আরপিও-তে যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের পাশাপাশি কারা হেফাজতে থাকা, সরকারি কর্মকর্তা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ভোট দিতে পারবে। ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।
রাজনৈতিক দলের অনুদানের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। যিনি অনুদান দেবেন তার ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে। অনিয়ম বন্ধে ইসি প্রয়োজনে নির্বাচনি আসন স্থগিতের বিধান যুক্ত করা হয়েছে সংশোধিত অধ্যাদেশে।
এ বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আগের আইনে বিধান ছিল যে, কোনো ভোটকেন্দ্রে গণ্ডগোল হলে ওই কেন্দ্রের ফলাফল বাতিলের। এখন ইসি যদি মনে করে- পুরো নির্বাচনি এলাকাতেই অনিয়ম হয়েছে, পুরো এলাকার ভোট বাতিল করা উচিত; তাহলে সেটা করতে পারবে। সেই ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়েছে।’