রাজবাড়ী: সেপ্টেম্বর মাসে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কল্যাণপুর ও আলিপুরে অবৈধ নসিমান চাপায় নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। বিআরটিএ রাজবাড়ী সার্কেলের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ মাসে জেলায় মোট ৭৮টি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৫২ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৫ জন। আহত ৭৫ জনের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনাই ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা ও অবৈধ মাহেন্দ্র দ্বারা সংগঠিত হয়েছে।
রাজবাড়ীর মহাসড়ক এখন রয়েছে অবৈধ যানবাহনের দখলে। কাগজে-কলমে তিন চাকার এসব যানের মহাসড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ জেলার বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন, করিমন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। কম গতির এ যানবাহন বাস-ট্রাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীতে তাদের ৬৪ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে। এর মধ্যে গোয়ালন্দ মোড় থেকে পাংশা উপজেলার শেয়ালডাঙ্গী পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার, গোয়ালন্দ মোড় থেকে বসন্তপুর ৫ কিলোমিটার এবং গোয়ালন্দ মোড় থেকে দৌলতদিয়া ১৪ কিলোমিটার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের অনেক স্থানই দখল করে আছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মাহেন্দ্র, রয়েছে একাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড। সেখানে এলোমেলোভাবে পার্ক করা হয়েছে এই ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মাহেন্দ্র। মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড়, গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট, চন্দনী বাসট্যান্ড, পাংশা আজিজ সরদার বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে এসব অবৈধ যানের স্ট্যান্ড। এছাড়া, রাজবাড়ী শহরের বড়পুল ও রেলগেট এলাকায়ও রয়েছে অস্থায়ী স্ট্যান্ড।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মাহেন্দ্রচালক বলেন, মহাসড়কে চলতে গেলে গোয়ালন্দ মোড়ে ১০ টাকা, গোয়ালন্দ বাজার ৪০ টাকা, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে আমাদের ১০০ টাকা দিতে হয় সড়কে। আগে ঝামেলা হলেও এখন ঝামেলা হয় না। পুলিশ এখন গাড়ি ধরে না।
দূরপাল্লার বাসের চালক মো. হুসাইন বলেন, বাসের সাথে পাল্লা দেয় থ্রি-হুইলারগুলো। এতে দুর্ঘটনা ঘটে অনেক। অনেক সময় তারা এমন ভাবে চালায় আমরা ঠিক মতো গাড়ি চালাতে পারি না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন, মাহেন্দ্র এসব যানবাহন রাস্তা দখল করে থাকে। যে কারণে গোয়ালন্দ মোড় থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত দ্রুতগতির বাস ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটারের বেশি গতি তোলা যায় না। অনেক সময় যাত্রীরা আমাদের সঙ্গে রাগারাগি করেন।
মহাসড়কে অবৈধ ত্রি হুইলার চলাচলের ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘ত্রি-হুইলারের সমস্যা দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। আলাদা সার্ভিস লেন না থাকায় এবং জনগণের সড়কে স্বল্প দূরত্বে চলাচলের পর্যাপ্ত বিকল্প যানবাহন না থাকায় সমস্যাটা জটিল হচ্ছে। প্রতিনিয়ত অবৈধ থ্রি-হুইলার বন্ধে পুলিশ কাজ করছেন।’
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য ত্রি-হুইলারের জন্য আলদা সার্ভিস লেন করা যেতে পারে। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও কমবে।’