মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, তার পরিবার এবং দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর্মান্দো বেনেদেত্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্তটি পেত্রো ও ট্রাম্প–এর চলমান রাজনৈতিক বিরোধকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেল। এর আগে গত মাসে পেত্রোর মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পেত্রো কলম্বিয়ার কোকেন শিল্প নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন এবং অপরাধী গোষ্ঠীগুলোকে জবাবদিহি থেকে রক্ষা করছেন।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন,“গুস্তাভো পেত্রো ক্ষমতায় আসার পর থেকে কলম্বিয়ায় কোকেন উৎপাদন কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ কোকেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে এবং মার্কিনীদের ক্ষতি করছে। প্রেসিডেন্ট পেত্রো মাদক কার্টেলগুলোকে বিকশিত হতে দিয়েছেন এবং তাদের থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন।”
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট পেত্রো এক্স-এ এক প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, “সিনেটর বার্নি মোরেনোর হুমকি বাস্তবায়িত হয়েছে। আমার স্ত্রী, সন্তান ও আমি ওএফএসি’র (অফিস অফ ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রো) নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছি।”
পেত্রো তার পোস্টে আরও লিখেন, কলম্বিয়া বহু দশক ধরে মাদকবিরোধী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করবেন।
এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ব্যক্তিগতভাবে নিষিদ্ধ কিছু আন্তর্জাতিক নেতার ছোট তালিকায় যুক্ত হলেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর অর্থনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করেছিল।
তবে পেত্রোর ক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন— তিনি বর্তমানে তার মেয়াদের শেষ প্রান্তে। সংবিধান অনুযায়ী দ্বিতীয়বার প্রার্থী হতে পারবেন না এবং ২০২৬ সালে তিনি পদ ছাড়বেন। তিনি আধুনিক কলম্বিয়ার প্রথম বামপন্থি প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত।
পেত্রো ও ট্রাম্পের সংঘাত শুরু হয় চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি, যখন ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন। ক্ষমতায় ফিরেই ট্রাম্প তার অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু করেন— অবৈধ অভিবাসীদের গণ–নির্বাসন।
শিগগিরই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে আটক অভিবাসীদের হাতকড়া পরা অবস্থায় সামরিক বিমানে তোলা ছবিগুলো ভাইরাল হয়।
প্রেসিডেন্ট পেত্রো সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন:“যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়ার অভিবাসীদের অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করতে পারে না।”
তিনি ২৬ জানুয়ারির ভোরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড্ডয়নরত দুটি নির্বাসন–বিমান গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোর হুমকি দেন।
ট্রাম্প পাল্টা হুমকি দেন কলম্বিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপের। অবশেষে পেত্রো পিছু হটেন। এর পর থেকে অভিবাসন, মানবাধিকার ও কোকেন উৎপাদন–সংক্রান্ত নানা বিষয়ে দুই নেতা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন।