চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে যুবদলের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে ছাত্রদলের এক কর্মী নিহতের ঘটনায় ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী’ এবং পুলিশকে দুষছেন সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।
মেয়রের দাবি, ‘কারও না কারও’ শেল্টারে (আশ্রয়) থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত ছাত্রদল কর্মীর মরদেহ দেখার পাশাপাশি স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মেয়র এ কথা বলেন।
এর আগে, সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাত পৌনে ১টার দিকে নগরীর বাকলিয়া থানার সৈয়দ শাহ রোডের মদিনা আবাসিকের সামনে এক্সেস রোডে যুবদলের দুই গ্রুপে দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে মো. সাজ্জাদ (২৩) এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হন। আহত হন আরও অন্তত ৮ জন।
নিহত সাজ্জাদ মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের অনুসারী এবং নগর যুবদলের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশার গ্রুপের কর্মী ছিলেন। নগরীর বাকলিয়ার তক্তারপুল এলাকায় তাদের বাসা এবং বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায়।
পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাকলিয়া থানার সৈয়দ শাহ রোডে লাগানো ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে বিরোধ থেকে যুবদলের এমাদাদুল হক বাদশা ও বোরহান উদ্দিনের অনুসারীদের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। সেখানে মেয়র শাহাদাত হোসেন ও নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার লাগিয়েছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা বোরহান উদ্দিন। অবৈধ ব্যানার-পোস্টার অপসারণে মেয়রের নির্দেশনা থাকায় বাদশার অনুসারীরা নিজ উদ্যোগে সেগুলো খুলে ফেলতে গিয়েছিলেন। সেই ব্যানার খোলার সময় উভয়পক্ষে গোলাগুলি হয়।
বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘাতে হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের শুরুতেই মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বিএনপি না, শোনেন আমি বলি, এরা সন্ত্রাসী গ্রুপ, এরা আগে ছাত্রলীগ-যুবলীগ করতো। তারা আজকে এখানে এসে কারও না কারও শেল্টারে আছে। আমি ইতোমধ্যে বাকলিয়া থানার ওসিকে কিন্তু বলেছি, বিশেষ করে বোরহান যে ছেলেটা, বোরহান এবং সোহেল- ছেলেগুলোকে গ্রেফতার করার জন্য আমি এক সপ্তাহ আগে বলেছি। এক সপ্তাহ কিংবা দশদিন আগে বলেছি। আমি পোস্টার-ব্যানার নামিয়ে ফেলার কথা আগেও বলেছি, শুধু এটা না, তাদের গ্রেফতার করার জন্য আমি পুলিশ কমিশনার সাহেবকে বলেছি। আমি একদম আপনাদের সামনে বলছি, পুলিশ কমিশনার সাহেব ওসিকে বলেছে।’
‘আমি বলেছি, যদি আমার দলেরও কেউ তাদের শেল্টার দিয়ে থাকে, দরকার হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, তাকেও গ্রেফতার করেন, এটা কিন্তু ওসিকে আমি বলেছি। এই ছেলেগুলোর বিষয়ে আমি স্পষ্ট বলেছি তাদের গ্রেফতার করতে। একদম আমি নাম ধরে বলেছি। আজ আমি মিডিয়ার সামনে বলছি।’
গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু ওসি কেন জানি তাদের গ্রেফতার করছে না। আমার মনে হচ্ছে বাকলিয়া থানার যারা দায়িত্বে আছেন এবং ওসিসহ যারা আছেন তাদের গতিবিধির ব্যাপারে আমার যথেষ্ঠ প্রশ্ন আছে। তারা আদৌ এখানে ভালো কোনো কাজ করছে কিনা। আমার মনে হচ্ছে, তারা আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তার পরামর্শে এ থানা চালাচ্ছে।’
‘আমি বাকলিয়া থানাকে দোষ দিচ্ছি, আমি সম্পূর্ণ বাকলিয়া থানাকে দোষ দেব, তারা যদি সুনির্দিষ্ট এই ছেলেগুলোকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসতে পারতো, মামলা দিয়ে যদি জেলের মধ্যে রাখতে পারতো, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না।’
মেয়র বলেন, ‘আজ যদি তাদের গ্রেফতার করা হতো, আজ থেকে ১০-১২ দিন আগে তারা একটা ঘটনা ঘটিয়েছিল, একটা বাসে তারা আমাদেরই যুবদলের কিছু ছেলেকে অ্যাটাক করেছিল, তারা পিকনিকে যাচ্ছিল, তখন তাদের ধরে থানায় দেওয়া হয়েছে। পরে তারা জামিন পেয়ে গেছে। কিন্তু এই যে ছেলেগুলোর কথা এসেছে, বোরহান, আমি বলেছি অনতিবলিম্বে ছেলেগুলোকে গ্রেফতার করা উচিত এবং আমাদের যদি কেউ থেকে থাকে তাকেও গ্রেফতারের আওতায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘এখানে সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। আমি বারবার বলছি, আমি এই শহরটাকে নিরাপদ শহর হিসেবে দেখতে চাই। আমি চাই না যে, এই শহর কোনো সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হোক, চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হোক।’
যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বাকলিয়ায় সংগঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে যুবলীগ-ছাত্রলীগের যেসব ক্রিমিনাল, এখানে একসময় ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক ছিল, আমাদের ছেলেদের অনেক অত্যাচার করেছে। তার কিছু ছেলেপেলে এখানে আছে এবং দক্ষিণ জেলার কিছু ছেলেপেলে আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি, তারা এখানে এসে একটা গাট বেঁধেছে এই এলাকায় এবং এই এক্সেস রোডে আগেও একটা ঘটনা ঘটেছিল, মার্ডার হয়েছে, আজকেও একটা হয়েছে। কালকেই আমি পুলিশ কমিশনারকে, কারণ কিছু ছেলে আমার কাছে এসেছিল, তারা বলেছিল এখানে একটা ঘটনা হতে পারে, এখানে খুবই উত্তেজিত পরিবেশ, আমি পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছি ফোন করে যে, এক্সেস রোডের ব্যাপারটা এবং এই ছেলেপেলেগুলোর বিষয়ে, ঘটনার মনে হয় ঘণ্টাখানেক আগে বলেছি। কাজেই আমি মনে করি যে, এই ছেলেগুলোকে অবশ্যই গ্রেফতার করা উচিত ছিল।’
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে ময়নাতদন্তের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিহত সাজ্জাদের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় এখনো মামলা করা হয়নি।